জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড এখনো থেমে যায়নি। ভেতরে ভেতরে তারা যে দল গোছানোর চেষ্টা করছে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে পুলিশের অভিযানে। গত শুক্রবার রাতে জয়পুরহাটের কালাই থেকে পুলিশ এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পাইপগান, দুই রাউন্ড গুলি, সাতটি ককটেল ও ১০০ গ্রাম গানপাউডার। জঙ্গিরা এখন শিশুদেরও দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানা যায়। কয়েক দিন আগে রাজধানীতে পুলিশি অভিযানে নিহত তিন জঙ্গির একজন ছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। চট্টগ্রাম থেকে এনে তাকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে আত্মঘাতী হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। তার পরিবার যেন শোকে পাথর হয়ে গেছে। এ রকম আক্ষেপ এখন অনেকের। এ পর্যন্ত যত জঙ্গি নিহত কিংবা গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের পরিবার ও স্বজনরা আজ অনুশোচনা করছে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে না পারার জন্য। তাই তারা আজ উদ্যোগী হয়েছে জঙ্গিবাদবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির কাজে। উদ্দেশ্য, আর কোনো অভিভাবককে যেন তাদের মতো শোকের সাগরে ভাসতে না হয়। এতে সহযোগিতা করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। অবশ্যই এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
গত শনিবার ঢাকায় সিটিটিসির আয়োজনে ‘র্যাডিকালাইজেশন ও উগ্রবাদ প্রতিরোধ : পরিবার ও সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় জঙ্গিদের অনেক স্বজন তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এবং সচেতনতা সৃষ্টির কাজে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখায়। তারা জানায়, জঙ্গিবাদে যুক্ত হওয়া তরুণদের মধ্যে হঠাৎ করেই কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা জানায়, তাদের মধ্যে হঠাৎ করেই ধর্মচর্চার ওপর বেশি আগ্রহ, পরিবারের সদস্যদেরও ধর্মচর্চায় চাপ দেওয়া, ঘর থেকে বের হওয়া বা মেলামেশা কমিয়ে দেওয়া, টাকনুর ওপর কাপড় পরা, কথায় কথায় ‘কাফের’, ‘তাগুদ’ ইত্যাদি শব্দ বলা, হারাম-হালাল খোঁজ করা, সরকারি মসজিদে না গিয়ে অন্য কোথাও নামাজ পড়তে যাওয়া, ফোন বা ল্যাপটপ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকা ও এ কাজে অতিরিক্ত গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টা করা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। অভিভাবকরা এসব পরিবর্তন সম্পর্কে সজাগ থাকলে সহজেই প্রিয় সন্তানের বিপথগামী হওয়া সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। পাশাপাশি তারা কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেশে সে সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখতে হবে।
সময়-সুযোগ পেলে জঙ্গিরা কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা ২০০৪-০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেখা গেছে। আবারও বাংলাদেশে এমন নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, তা কোনো সুস্থ ও বিবেকসম্পন্ন মানুষের কাম্য হতে পারে না। আর শুধু পুলিশ বা অস্ত্র দিয়েও তাদের ঠেকানো সম্ভব নয়। ধর্মের যেসব ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তরুণদের বিপথগামী করা হয় সে সম্পর্কে আলেমদেরই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হতে হবে। অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।