আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

75

কাজিরবাজার ডেস্ক :
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি লাভের আশায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে অশ্র“সিক্ত নয়নে দুই হাত তুলে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আমিন, আল্লাহুমা আমিন, ছুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা রবিবার শেষ হয়েছে। মোনাজাতে লাখ লাখ মুসল্লি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং কেঁদে বুক ভাসান। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি ও কামনা করা হয়। মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, ইহলৌকিক ও পরলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। রবিবার বেলা ১০টা ১৯ মিনিট থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ২৭ মিনিট স্থায়ী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের মুরব্বি বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের। এর মধ্যে ১১ মিনিট আরবিতে এবং ১৬ মিনিট বাংলায় মোনাজাত করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ এই আখেরি মোনাজাতে জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তি, আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে সূর্য উদয়ের পূর্ব থেকে শুরু হয় ইজতেমামুখী মানুষের ঢল। যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় গাড়ি না পেয়ে হেঁটে মুসল্লিরা ধাবিত হয় ইজতেমা ময়দানে। অগণিত মুসল্লি ইজতেমা এলাকার বিভিন্ন সড়ক, মিল কারখানা ও বাড়ির ছাদে বসে মোনাজাতে অংশ নেন। অনেকেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মোনাজাতে শরিক হন।
আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল অঘোষিত ছুটি। মহিলারাও মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।
শেষ দিনে যারা বয়ান করলেন : মোনাজাতের আগে চলে হেদায়েতি বয়ান। রবিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট থেকে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত তাবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে হেদায়েতি (দাওয়াতি কাজের পদ্ধতি) বয়ান করেন তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। এর আগে বাদ ফজর মজমা জোড়ানো সংক্ষিপ্ত বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুর রহিম নকিব।
কনফারেন্সে ও মোবাইলে মোনাজাত : ইজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে কনফারেন্সের মাধ্যমে চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরি মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে কয়েক হাজার নারী পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পার্শ্ববর্তী সড়কে ও ভবন গুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারণে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে। আবার দেশ বিদেশের অনেকে এ্যানড্রয়েড মোবাইলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং ইজতেমাস্থলে অবস্থানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও মোনাজাতে শরিক হয়েছেন।
মোনাজাত শেষে যানজট : মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে টঙ্গীর আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় জনজট ও যানজট।
চার হাজার জামাত তৈরি : বিভিন্ন দেশে তাবলিগের কাজে বের হতে এবার ইজতেমাস্থলে দ্বিতীয় পর্বে দেশীয় প্রায় ৩ হাজার জামাত তৈরি হয়েছে বলে ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া প্রায় এক হাজারের মত বিদেশী জামাত তৈরি হয়েছে।
১ বদনা পানি ১০ টাকা : রবিবার ইজতেমা ময়দানের আশপাশে প্রতি বদনা পানি ১০ টাকা হারে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অনেক মুসল্লি প্রতি পাতা পত্রিকা ২ টাকা করে কিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও আশপাশের ফুটপাতে বসে মোনাজাতে অংশ নেন।
অতিরিক্ত ভাড়া : টঙ্গী ব্রিজ থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ১০ টাকার ভাড়া এক শ’ টাকা এবং টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৫ টাকার ভাড়া ৬০ টাকা করে আদায় করা হয়। বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও কয়েক গুণ বেশি বাস ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
পকেটমার আটক : বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা থেকে রবিবার বেশ কয়েকজন হকার ও পকেটমার আটক করা হয়েছে।
মুসল্লিদের চিকিৎসা : ইজতেমা ময়দান এলাকায় স্থাপিত টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্প ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে গত তিন দিনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ২০ সহস্রাধিক মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন।
দুই পুলিশ আহত : বিশ্ব ইজতেমায় দায়িত্বপালন করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পৃথক ঘটনায় দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- ঢাকা রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) কর্মরত কনস্টেবল (৬৬৪) মোঃ মোশারফ হোসেন এবং রাঙ্গামাটি পুলিশ লাইনের কনস্টেবল (নং-৪১০) এটিএম রুহুল আমিন।