নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কিভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে, তা চূড়ান্ত করে একটি চুক্তিতে সই করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে এক হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।
নতুন এই চুক্তি অনুযায়ী পরিচয় যাচাই ও ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এক ফরমেই থাকবে পুরো পরিবারের ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব। সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশ পাঁচটি ট্রানজিট শিবির নির্মাণ করবে। অন্যদিকে মিয়ানমার তার সীমানায় রোহিঙ্গাদের গ্রহণের জন্য দুটি অস্থায়ী অভ্যর্থনা শিবির বানাবে। উত্তর রাখাইনের একটি শিবিরে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করবে। তাদের জন্য দ্রুত বাড়ি নির্মাণ করে পরবর্তী সময়ে সরিয়ে নেওয়ার কথা উল্লেখ আছে সমঝোতা চুক্তিতে। কূটনৈতিক মহলে মিয়ানমারের এ আশ্বাস নিয়ে সংশয়-সন্দেহ আছে। গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট স্বাক্ষর করেন। ১৯ ডিসেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন ও এর কার্যপ্রণালী ঠিক করা হয়। গত মঙ্গলবারের ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট চূড়ান্ত ও স্বাক্ষরিত হওয়ায় প্রত্যাবাসনসংক্রান্ত সব ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এর পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সংশয়গ্রস্ত সচেতন মহল। কারণও অসংগত নয়। ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির পর নতুন করে রোহিঙ্গাদের এ দেশে আসার কথা নয়। কিন্তু ইতিহাস বলছে, ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছর পর্যন্ত রোহিঙ্গারা এ দেশে আশ্রয় নিয়েছে বা নিতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমারের আন্তরিকতা নিয়ে পর্যবেক্ষক মহলে প্রশ্ন রয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে সে দেশের সেনাবাহিনী নানা কৌশলে কিংবা অজুহাতে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে পারে। আবার দেশে ফিরে যাওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে না দিয়ে তাদের সুনির্দিষ্ট ক্যাম্পে জীবনযাপনে বাধ্য করতে পারে। গত ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও তা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এখানেই আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশকে এখন কূটনৈতিকভাবে আরো কৌশলী হতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রেখে এই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলতে হবে। রাখাইনে যাওয়ার পর তাদের বাসস্থান, নাগরিকত্বসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে রাখতে হবে।