দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে, এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়া হয়। বহু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে রাস্তায়, যেগুলোর নিয়ন্ত্রণে সমস্যা রয়েছে। বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে মহাসড়কে ডিভাইডার তৈরি করা হয়েছে। শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি। অনেক দুর্ঘটনার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে না। ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, দুর্ঘটনার সব খবর নথিভুক্তও হয় না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন ভালো জানেন না। সড়ক দুর্ঘটনার এটাও একটা কারণ। দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে, তার অধিকাংশই চলাচলের অযোগ্য, ফিটনেসবিহীন। অন্যদিকে আমাদের দেশে চালকদের বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তাঁদের অনেকেই আধুনিক সড়ক নির্দেশনা বুঝতে অক্ষম। গাড়িচালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তত এসএসসি নির্ধারণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল উচ্চ আদালত থেকে। শুক্রবার রাজধানীতে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির আলোচনাসভায় এসব বিষয়ই নতুন করে উঠে এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১৪ দফা সুপারিশও উত্থাপন করা হয়েছে এই আলোচনাসভায়।
আমরা কোনোমতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনের মৃত্যুও কাম্য নয়। এ জন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। আলোচনাসভায় উত্থাপিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেকাংশে কমে আসবে বলে আমরা মনে করি। একই সঙ্গে চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। সড়কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অনিয়মকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আমরা মনে করি, দুর্ঘটনা নামের হত্যাকাণ্ড রোধে সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। সমন্বিত গণপরিবহনব্যবস্থাও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর হবে বলে আমরা মনে করি।