হতাহতের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত ৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ রেলস্টেশনে। দুই ট্রেনের সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে থানায়। এ দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন একটি, বাংলাদেশ রেলওয়ে তিনটি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
যেকোনো দুর্ঘটনাই ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য বেদনাদায়ক। এসব দুর্ঘটনায় অনেক পরিবারই পথে বসে যায়। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার ও স্থানীয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাত্ক্ষণিক অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। এর মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন দেবে ২৫ হাজার টাকা। একই সঙ্গে আহতদের প্রত্যেককে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা সাহায্যের ঘোষণা দেন মন্ত্রী। কিন্তু আহত ও নিহতদের পরিবারকে কী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে? বিশেষ করে রেলওয়ে যখন মনে করছে এই দুর্ঘটনাটি ‘হিউম্যান ফেইলিউর’, তখন তো রেলওয়ের ক্ষতিপূরণের বিষয়টিই সামনে চলে আসে। দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে ৭৬ বছর আগের আইনে। ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ৮২ ধারা ১৯৪৩ সালে সংশোধন করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রীর মৃত্যু ঘটলে বা কেউ আহত হলে বা যাত্রীর কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমনকি যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যক্তি ও মালপত্রের জন্যও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আইনে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা আছে।
আজকের দিনের বাজারমূল্যে এই ক্ষতিপূরণ কতটা যৌক্তিক? কোন অধিকারে বা ক্ষমতাবলে রেলওয়ে মানুষের জীবনের দাম এত কম নির্ধারণ করেছে! অবশ্য রেল সূত্র জানাচ্ছে, ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে রেলওয়ে নতুন প্রস্তাবে ক্ষতিপূরণ বাবদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, আহতদের ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এটাও কি বর্তমান সময়ের বিবেচনায় একেবারেই কম অর্থমূল্য নয়? জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি ভেবে দেখা একান্ত প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। বর্তমান সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হোক।