জীর্ণ-পুরনোকে পেছনে ফেলে আমরা নতুন বছরে পা রেখেছি। শুরু হয়েছে ইংরেজি নতুন বছর ২০১৮ সাল।
কেমন হবে এই নতুন বছরটি এ নিয়ে নানা রকম জল্পনা রয়েছে। অনেকে মনে করছেন, উন্নয়নের বর্তমান গতি অব্যাহত থাকলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সেই গতি অব্যাহত থাকবে কি না তা নিয়ে অবশ্য কেউ কেউ সংশয়ও প্রকাশ করছেন। বিদায়ী বছরে চালের দামসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ অস্বস্তিতে ছিল। নতুন বছরে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট দেশকে কত দূর ভোগাবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে অনেকের, বিশেষ করে কক্সবাজার জেলার বাসিন্দাদের। সব কিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে তা হলো নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ মাসে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঢাকা উত্তরসহ ছয়টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে তার আগেই। এসব কারণে অনেকেই এই বছরকে নির্বাচনের বছর হিসেবে উল্লেখ করছেন। সে কারণে আশঙ্কার কথাও বলছেন অনেকে। নির্বাচনের আগে অস্থিতিশীলতা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হানাহানি বেড়ে যায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যায়। কয়েক দশক ধরে এমনটাই দেখে আসছে মানুষ। গত দুই বছর রাজনৈতিক অশান্তির বাইরে থাকা মানুষ তাই আগামী দিনের পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা উদ্বেগে আছে। মানুষ চায় নির্বাচন হোক কিন্তু শান্তি বিনষ্ট না হোক; রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক সহনশীলতার পরিচয় দিক।
নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। উন্নত দেশগুলোতে এ নিয়ে সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় সেসব দেশে, যেখানে ক্ষমতাসীনরা যেকোনো প্রকারে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়; অন্যদিকে ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দল যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেওয়ায় ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নেয়নি। উপরন্তু বিএনপি নির্বাচন প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিল। ফলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। এরপর সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে গিয়ে চলে দীর্ঘকালের হরতাল। সেই হরতাল পালনে মানুষকে বাধ্য করার জন্য চলে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ বহু ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। ফলে অনেক নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। পঙ্গু হতে হয়েছে বহু মানুষকে। মানুষ তেমন রাজনীতি আর দেখতে চায় না। নির্বাচনের আগেই আলোচনার মাধ্যমে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজতে হবে।
নির্বাচনকে মানুষ উৎসব হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। সে হিসেবে ২০১৮ সাল শুধু নির্বাচনেরই বছর নয়, উৎসবেরও বছর। এখন সরকার, নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠিক করতে হবে, তারা ২০১৮ সালকে উৎসবের বছর করবে, না দেশের মানুষকে আতঙ্কের মুখে ঠেলে দেবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ জনগণকে একটি উৎসবের বছরই উপহার দেবে। এ জন্য সময় থাকতে আলোচনার মাধ্যমে এবং যৌক্তিকভাবে সব বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নিতে হবে।