ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
বালাগঞ্জে কুশিয়ার নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে নদী পারের আতংকিত বাসিন্দারা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত এক দিনের ব্যবধানে উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের প্রায় ৪০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের ১১টি পরিবার, কায়েস্থঘাট দক্ষিণ গ্রামের ১৩টি, বিনোদপুর গ্রামের ২টি, কায়েস্থঘাট মাঝপাড়া গ্রামের ৬টি, হাড়িয়ারগাঁও-কায়েস্থঘাট চক গ্রামের ২ টি ও নতুন সুনামপুর গ্রামের ২টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে বলে পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রস্তুতকৃত তালিকা সূত্রে জানা গেছে। তবে বেসরকারী হিসেবে মতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় অর্ধ শতাধিকের উপরে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আক্রান্ত এসব পরিবারের মধ্যে প্রায় আট-দশটি পরিবারের শতভাগ ভিটেমাটি নদীর পেটে চলে যাওয়ায় তারা মানবেতন জীবন-যাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অগ্রহায়ণ মাসের শুরুর দিকে কুশিয়ারা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। একদিকে নদীর পানি কমছে আর অন্যদিকে গত কয়েক দিনের অব্যাহত টানা ভারি বর্ষণে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভাঙন আক্রান্ত এলাকায় ফাটল দেখা দেয়। মঙ্গলবার দিনের মধ্যভাগ থেকে বিকেলে পর্যন্ত এই ছয়টি গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবারের ভিটেমাটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। ভিটেমাটি হারানো আশ্রয়হীন এসব পরিবারের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত নি:স্ব অসহায় এসব পরিবারগুলোকে জরুরী ভিত্তিতে সরকারী ও বেসরকারী সহায়তা প্রদানের জন্য জোর দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ ভাঙন আক্রান্ত গ্রামগুলো ঘুরে দেখেছেন। এসময় পূর্ব গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাসসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বুধবার বিকেলে পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা ভাঙন কবলিত এলাকায় যাননি। এদিকে বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মুজিবুর রহমান মুজিব গৃহহারাদের পুর্নবাসনের জন্য ১০শতাংশ ভূমি এবং ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রাধিকা রঞ্জন দাস গৃহহারাদের জন্য কিছু ভূমি প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে-সাদেকপুর গ্রামের মনতাজ উল্লা, মতসির আলী, হারুন মিয়া, সমছু মিয়া, লিয়াকত মিয়া, কায়েস্থঘাট মাঝপাড়া গ্রামের মো. আলমগীর, তাজিরুন বেগম, মেহেরুন নেছা, আহমদ আলী, আম্মাছ আলী, সেলিম মিয়া, আলমিছ মিয়া, আব্দুল কাইয়ুম ও হাড়িয়ারগাঁও গ্রামের জিতু মিয়া, সমির আলী, সিরাজ মিয়া, সফিক মিয়া ও বিলাল আহমদের পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে কায়েস্থঘাট মাঝপাড়া গ্রামের রাধিকা রঞ্জন দাস, লিটন মিয়া, ফারুক মিয়া, এলাইছ মিয়া, মকদ্দছ আলী, লুৎফুর রহমান, জমসেদ আলী, লুৎফুর মিয়াসহ অন্যান্যদের বসতবাড়ি ভাঙনের অধিক ঝুকিতে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এছাড়া ভাঙন আক্রান্ত গ্রামগুলোর আরো অর্ধ শতাধিক পরিবার ভাঙন আশঙ্কায় আতংকিত হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ বলেন, আমি বুধবার দিনব্যাপি ভাঙন আক্রান্ত গ্রামগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত পুর্নবাসনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।