ঋণ খেলাপি বাড়ছে

21

ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার প্রবণতা দিন দিনই বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। শুধু গত তিন মাসেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষে তা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকায়। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে অবলোপন করা হয়েছিল বা হিসাবের খাতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল নিট ৪০ হাজার ১০১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। সেটি বাদ দেওয়া না হলে এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াত এক লাখ ৫০ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। কারা এই ঋণখেলাপি? কেন তাদের ঋণ আদায় করা যায় না? কেন তাদের ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ নিলামে ওঠে না? দেশের মানুষের কাছে তা এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে আছে। মানুষ আরো অবাক হয়, যখন দেখা যায় এই ঋণখেলাপিদের আরো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৩২.২০ শতাংশ। বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের খেলাপি চার হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা বা ১৯.৪৬ শতাংশ। অপর দিকে বেসরকারি খাতের ৪২টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ ৪৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বা ৭.০৮ শতাংশ। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের দিক থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কোনো তুলনা নেই। তার পরও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মূলধনের ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর বাজেটে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। আসন্ন বাজেটেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে দেড় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদানের প্রস্তাব রয়েছে বলে জানা গেছে। কেন এই ভর্তুকি? বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানার ভুয়া ব্যক্তির নামে ঋণ দেওয়া হয়, পরে যার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় গ্যারান্টি বা কাগজপত্রও রাখা হয় না। আবার রাজনৈতিক মদদপুষ্ট স্বার্থান্বেষীদেরও ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে বাধ্য হয়, যার বড় অংশই ফেরত পাওয়া যায় না। একজন দরিদ্র কৃষক সাংসারিক প্রয়োজনে কিছু কিনতে গিয়ে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট দিতে বাধ্য হয়। একজন সামান্য চাকরিজীবী, বেতনে যার সংসার চলে না, তাকেও বেতনের একটি অংশ আয়কর হিসেবে দিয়ে দিতে হয়। সেই অর্থে কেন ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের দায় মেটানো হবে?