শুধু বাংলাদেশ নয়, দুর্নীতি এখন বৈশ্বিক সমস্যা। একসময় দুর্নীতিতে এক নম্বরে ছিল বাংলাদেশ।
দুর্নীতির দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে জাতিগত প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল, তা সংগঠিত করা সম্ভব হয়নি নানা কারণে। ফলে দেশে দুর্নীতিবাজদের শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহল এখনো নানাভাবে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। ঋণের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ, পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করে অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করছে একটি শ্রেণি। তাদের পেছন থেকে উৎসাহ জোগাচ্ছে কিছু প্রভাবশালী। শুধু দুর্নীতি নির্মূল নয়, এদের মুখোশ উন্মোচনও জরুরি।
দেশের দুর্নীতি তখনই বিস্তার লাভ করে, যখন তা প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়। সাংবিধানিকভাবে দেশের সব নাগরিকের অধিকার সমান হলেও সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে অনেকে বাড়তি সুবিধা নিয়ে থাকে। সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
সব সময় দেখা যায়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা ঘনিষ্ঠরাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে বাংলাদেশ এখনো মুক্ত হতে পারেনি। অতীতে সরকার কাঠামোয় ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবশালী ও অশুভ একটি চক্রের তৎপরতায় দেশে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করতে দেখা গেছে। সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেককেই রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হতে দেখা গেছে। দুর্নীতিবাজ শ্রেণি এভাবেই সমাজের নানা স্তরে প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের সহায়-সম্পত্তি বাড়িয়ে থাকে। এ ধরনের দুর্নীতিবাজের উত্থানে সমাজেও এক ধরনের বৈষম্য দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের আলোচনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানও বলেছেন, ‘আমাদের সমাজে দুর্নীতিবাজ নামের শকুনের উদ্ভব হয়েছে। এদের উৎখাত করতে চাই। ’ তিনি বলেছেন, দুর্নীতিবাজরা ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কারো একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়। সমাজের সর্বস্তরে প্রতিরোধ গড়ে তোলা গেলে দুর্নীতি দূর করা কঠিন হবে না।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়টি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা গেলে সমাজ ও রাষ্ট্র দুর্নীতিমুক্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা আশা করব, সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালিত হবে। সবার সহযোগিতায় সমাজ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবে।