ব্যাটারী চালিত রিক্সা চার্জে ॥ চোরাই পথে প্রতিদিন নগরীতে ২৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে

609

CNGসিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট নগরী ও শহরতলীতে ব্যাটারি চালিত অবৈধ রিক্সা-অটোরিক্সা প্রায় ১০ হাজার। এসব রিক্সা চার্জের জন্য সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৫ শতাধিক চোরাই চার্জার গ্যারেজ গড়ে ওঠেছে। এই রিকশা চার্জ খাতে প্রতিদিন ২৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে প্রতিমাসে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার রাজস্ব আয়। সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ও অটোরিক্সা মালিকদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
খোদ যোগাযোগ মন্ত্রী সিলেটে অটোরিক্সা আটক করে অভিযানে নামার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে নির্দেশ দিলেও এখন নেই কোনো অভিযান। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে সিলেটের চার্জার গ্যারেজের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ট্যাকনিক্যাল সড়কে অন্তত দুই শ গ্যারেজে বিদ্যুতের চোরাই লাইন আছে। প্রতি রাতে এসব গ্যারেজে শত শত অটোরিক্সা চার্জ দেন চালকেরা। একেকটি অটোরিক্সা চার্জে নেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। ১১ হাজার কেভির মেইন লাইন থেকে চোরাই লাইন নামিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে এসব গ্যারেজে। একই ভাবে সিলেট নগরীর আম্বরখানা, মেন্দিবাগ, ঘাসিটুলা, দাঁড়িয়াপাড়া, দক্ষিণ সুরমার তেলিবাজার পয়েন্ট সংলগ্ন দোকান, লাউয়াই রোড, গোটাটিকর ও শিববাড়ি এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক চোরাই চার্জার গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। প্রতি দিন ২৪ হাজার বিদ্যুৎ ইউনিট খরচ হচ্ছে এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চার্জ দিতে।
সূত্রে জানায়, নগরীর ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা সমিতি বলছে যে, আমারা সাধারণ প্লেইট দিয়ে চালাচ্ছি। কিন্তু এটা সাধারণ প্লেইট নয়, মালিকরা ব্যক্তিগত প্লেইট তৈরী করে প্রতি ৬ মাসের জন্য ৩ থেকে ৪ টাকা হাজার আদায় করে সদস্য করা হয়। তখন নম্বর দিয়ে সমিতির মাধ্যমে একটি প্লেইট দেয়া হয় এবং ঐ প্লেইটের গায়ে লেখা থাকে উচ্চতর আদালতসহ সমিতির মোবাইল নম্বর। পরে ব্যাটারি চালিত রিক্সা নগরীতে চালাতে দেয়া হয়। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ বৈধ রিক্সা চালতে হয়রানীর শিকার হন এবং অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা হয়রানী করা বা রিক্সাটি আটক করা হয় না। বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলো থেকে সরকার এ ধরনের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা তুলে নিলেও সিলেটে ব্যাটারি চালিত রিক্সা তুলে নেয়নি। বরং দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ট্রাফিক সূত্র জানায়, সিলেটে নানা দেনদরবার করে ৪ হাজার অটোরিক্সা চলাচলের অনুমতি দিলেও চলছে প্রায় ১০ হাজার রিক্সা।
সিসিক সূত্র জানায়, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরি যানজটমুক্ত নগরী গড়তে অবৈধ অটোরিক্সা চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। গত বছরের ৭ নভেম্বর সিলেটে যোগাযোগমন্ত্রী সফরে এসে বিমানবন্দর সড়কে ও চন্ডিপুলে ১০টি অটোরিক্সা আটক করে এই যানটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবু চলছে অবৈধ অটোরিক্সা ‘টমটম’ ও ব্যাটারি চালিত রিক্সা। এতে নগরীতে যানজট বাড়ছে। বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে ২টি চোরাই বিদ্যুৎ সংযোককারী সিন্ডিকেট চক্র। ট্রাফিক ও বিদ্যুতের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দিন দিন সিলেটে বেড়ে চলেছে এই অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের জাল।
অভিযোগ উঠেছে, সিলেট বিউবো’র -৩ এর লাইনম্যান রফিকুল ইসলাম শিশু সিলেটের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা মালিক সমিতির সঙ্গে যোগসাজশে এসব লাইনের নিয়ন্ত্রণ করছেন। এসব অটোরিক্সার নাম্বার প্লেইটে ‘ অটোরিক্সা মালিক সমিতি, ক্রমিক নম্বর দিয়ে চলছে নগরীর বিভিন্ন সড়কে।
একজন রিক্সা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বৈধ রিক্সাগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি ব্যাটারি চালিত রিক্সার ব্যাটারি চার্জে ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রতি রিক্সায় চার্জ হিসেবে খরচ হয় ৮০ টাকা। সিলেটে প্রায় ১০ হাজার অবৈধ ব্যাটারি চালিত রিক্সার খরচ পড়ছে প্রতিদিন ৬৪ হাজার টাকা। অবৈধ লাইন সংযোগ দিয়ে বিদ্যুৎ খরচ হয় প্রতিদিন ২৪ হাজার ইউনিট। গ্রামে গঞ্জে দিন দিন এসব ব্যাটারি চালিত রিক্সা ছড়িয়ে পড়ছে। আর সরকার প্রতি মাসে বিদ্যুৎ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সিলেট নগরীতে এখন ৩ ধরনের প্লেইট লাগিয়ে প্রায় ১০ হাজার অটোরিক্সা চলছে।
একই ভাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক মিটার রিডার জানান, একটি অটোরিক্সায় ৩টি থেকে ৫টি ব্যাটারি থাকে। তিন ফেজের লাইনে চার্জ দেওয়ার সময় লাইনে লোড বেড়ে যায়। তখন ট্রান্সফরমারগুলো ঘনঘন বিকল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা মালিক সমিতির নাম্বার প্লেইটে ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের ডিবিশিন-৩ এর সহকারী লাইনম্যান রফিকুল ইসলাম মিশু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টেকনিকেল রোডে চার্জার কারখানাটি আমার আত্মীয়ের। তবে এর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই।’
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ডিভিশন ৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল লাল মোহন্ত বলেন, গত ক‘দিন আগেই আমরা অভিযান করেছি। দক্ষিণ সুরমা এলাকার এ ধরনের ১৫টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি।’
সিলেট ট্রাফিক পুলিশের উপ-সহকারি কমিশনার নিকোলিন চাকমা বলেন, এদেরকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছি না। আবার অভিযানে নামা হবে।‘