কুলাউড়ায় পান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত দেড় লক্ষ মানুষের জীবন দুর্বিষহ

83

PIC KULAURA PANশাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের হরতাল-অবরোধ আর চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা কারণে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় পান ক্রয়-বিক্রয় কমে যাওয়ায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে ব্যবসায়ীসহ শ্রমজীবী ১৫০০০ মানুষ। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা কারণে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা। এদের মধ্যে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবীরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। এ উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৪২টি ছোটবড় পান পুঞ্জি। আদিবাসীদের প্রধান পেশা পান চাষ। পান চাষ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। কেবল আদিবাসীরাই নয়, পানের সঙ্গে জড়িত পাইকারী ও খুছরা ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছে। শ্রমজীবীদের মধ্যে দৈনিক পারিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করে চলে অনেকের পরিবার।
সূত্র জানায়, কুলাউড়া উপজেলার সর্ববৃহৎ খাসিয়া পানের আড়ৎ রবির বাজারে। পাহাড়ের গহিনে চাষকৃত এসব পানের সিংহ ভাগ-ই আসে রবির বাজারের বিভিন্ন আড়তে। রবির বাজারে ছোটবড় প্রায় ২০০টি পান আড়ৎ রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন পুঞ্জি থেকে খাসিয়া পান বাজারজাত করেন স্থানীয় প্রায় দুই হাজার পান ব্যবসায়ী। এসব আড়তে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারী পান ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় বাজারজাত করে। কিন্তু বর্তমানে দেশে চলমান লাগাতার হরতাল-অবরোধের প্রভাব পড়েছে রবির বাজারের পান ব্যবসায়।
সরজমিনে কুলাউড়া পৌরশহরের দক্ষিন বাজার ও রবির বাজারের পান আড়ৎগুলো ঘুরে দেখা যায়, আগের মতো আসছেন না বিভিন্ন জেলার পান পাইকারীরা। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় পান ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও আদিবাসী চাষিরা। ব্যবসায়ীরা জানান, অবরোধ-হরতালে যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় কমে গেছে পান বিক্রি। আগে সাপ্তাহে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ গাড়ি খাসিয়া পান দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত। আর এখন যাচ্ছে ২৫/৩০ গাড়ি। অথচ বর্তমান সময় হচ্ছে পান ব্যবসার উত্তম সময়। এ সময় পুঞ্জি থেকে আনা প্রতি কুড়ি (২০ মোটা) পান ৩৫০০/৪৫০০ টাকা বাজারমূল্য থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ২০০০/২৫০০ টাকা। এতে করে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিলেটের বিভিন্ন বাজার থেকে আসা পান বেপারি আহমদ আলী, সজীব মিয়া, বশির মিয়া, আলাউদ্দিন আলী,বুলবুল আহমদ, শাহজান মিয়া, ময়ূর আলী ও আবদুর রহিম জানান, কুলাউড়ায় চাষকৃত খাসিয়া পানের চাহিদা দেশের বিভিন্ন বাজারে রয়েছে। সহনশীল মূল্যে ভাল পান ক্রয়সহ পরিবহন ব্যবস্থা ভাল থাকায় আমরা এখান থেকে পান ক্রয় করতাম। বর্তমানে হরতাল-অবরোধ থাকায় পরিবহন ভাড়া আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পান ব্যবসায়ীদের ধস নামবে। লুতিঝুড়ি পুঞ্জির খাসিয়া পান চাষি মি. খিমন, এর্বি, মুটি ও মায়ান প্রমুখ জানান, অবরোধ-হরতালের কারণে পানের বাজারে প্রভাব পড়েছে। পানের বাজারে যথেষ্ট পান থাকলেও ক্রেতা তুলনামূলক কম। তাই বাধ্য হয়ে পান চাষিদের কম দামে পান বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার পানের দাম কম থাকায় অনেকে গাছ থেকে পান তুলছেন না। সেসব গাছের পান ঝড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।