চাপ বা ভীতির কাছে নত হব না- খালেদা জিয়া

33

Copy of Copy of khaleda hasina (2)_52731কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আমার ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোকাবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছি। এ বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আমার সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে সর্বমুখী চাপ ও অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করে তাঁরা আমাকে জনগণ ও নেতা-কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সচেষ্ট। কিন্তু আমি সবাইকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, কোনো অনৈতিক চাপ বা ভীতির মুখে আমি নত হব না, ইনশা আল্লাহ। যেকোনো পরিস্থিতি বা পরিণতির জন্য আমি তৈরি আছি।’
তিনি বলেন, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো না পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে। সবাইকে এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি পরিষ্কার ভাষায় আবারও বলতে চাই, মানুষের জীবন নিয়ে অপরাজনীতি আমরা করি না। হত্যা ও লাশের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন হীন ও নৃশংস অপরাজনীতি আমরা কখনো করব না। এখন যারা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে, তারাই অতীতে আন্দোলনের নামে যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে ডজন খানেক মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। লগি-বৈঠার তাণ্ডবে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। লাগাতার হরতালে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পর্যন্ত পেছাতে বাধ্য করেছে।’
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় নিরপরাধ মানুষকে নৃশংস পন্থায় হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এর দায় চাপিয়ে আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার মাধ্যমে অপপ্রচার ও বিরোধী দলকে এ সুযোগে দমন করার অপরাজনীতি ব্যর্থ হবে। বাংলাদেশের মানুষ এত বোকা নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, গত ৬ জানুয়ারি অবরোধ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ জন বিএনপির নেতা-কর্মীকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, সাজানো বন্দুকযুদ্ধ ও নৃশংস অন্যান্য পন্থায় হত্যা করা হয়েছে। গুলি করে ও অন্যান্য পন্থায় আহত করা হযেছে শত শত নেতা-কর্মীকে। আটকের পর নিখোঁজ রয়েছে অসংখ্য নেতা-কর্মী। ১৭ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেঢতার করা হয়েছে। এভাবে সরকার সারাদেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আন্দোলন দমনের ষড়যন্ত্র করছে।’
২০ দলীয় নেত্রী বলেন, ‘বর্তমান নৃশংস ঘটনাবলীও আওয়ামী লীগের অতীত কার্যকলাপের সঙ্গেই মিলে যায়। কাজেই দেশবাসী মনে করেন যে, আন্দোলন দমন ও বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়াবার উদ্দেশ্যে শাসকদলই সুপরিকল্পিতভাবে এইসব সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসন কায়েমের অপতৎপরতার কারণে অতীতে দেশ জঙ্গীবাদের কবলে পড়েছিল। আমরা তা দমন করেছিলাম। আজ আবারও তারা একই কায়দায় উদারনৈতিক রাজনীতির ধারাকে নিশ্চিহ্ন করতে যে নীতি অবলম্বন করছে তাতে আবারো ওই একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। তিনি এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো কিছুতে কর্ণপাত করেনি। বরং সীমাহীন অত্যাচার উৎপীড়ন চালিয়ে গেছে। অবৈধভাবে করায়ত্ব করা রাষ্ট্রক্ষমতা টিকিয়ে রাখার হীন অভিপ্রায়ে তারা কোনো রকম সমঝোতায় রাজী হয়নি।’
নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের কথা তারা স্বীকার করতেও রাজী নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেগম জিয়া বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া দেশবাসীর সামনে আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। তাই ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্র, দেশবাসীর ভোটাধিকার ও মৌলিক মানবিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে, শান্তি, নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে আমাদের এ আন্দোলন অভীষ্ট লক্ষে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকবে।’ তিনি এই আন্দোলনে সকলকে শরীক হওয়া জন্য আবারও আহ্বান জানান।