কুলাউড়ায় সাধারণ মানুষের নিজস্ব অর্থায়নে সম্পন্ন হলো ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ গুঙ্গিজুড়ী খালের খনন কাজ

40

Kulaura pic 5শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কোন সরকারি অনুদানে নয়, এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় এবং তাদের নিজস্ব অর্থায়নে কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘ ৭ কিলোমিটার গুঙ্গিজুড়ী খালের খনন কাজ সম্পন্ন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পানি প্রবাহ শুরু হওয়ায় মৃত গুঙ্গিজুড়ী খাল ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন। এর ফলে হাকালুকি হাওরের দক্ষিণ তীরের কয়েক হাজার হেক্টর জমি আসবে বোরো চাষের আওতায়।
সরেজমিন হাকালুকি হাওরে দক্ষিণ তীরে গেলে চোখে পড়ে মানুষের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস। কারণ মৃত গুঙ্গিজুড়ী খাল দিয়ে বুক সমান পানি আসছে দ্রুত গতিতে। হাওর তীরের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের ভুকশিমইল, মহেষগৌরী, মদনগৌরী, গৌড়করণ, কুরবানপুর গ্রামগুলোর মানুষের বোরো ক্ষেতে আর পানির কোন সঙ্কট থাকছে না। এছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা পাবে শশারকান্দি, কুরবানপুর, নবাবগঞ্জ, মীরশংকর,  দৌলতপুর  ও শাহাপুর আংশিক মৌজার কয়েক হাজার কৃষক। শুধু তাই নয় হাকালুকি হাওরের গৌড়কুড়ি বিলসহ আশপাশের কয়েক হাজার হেক্টর জমি আগামী বোরো মৌসুমে চাষের আওতায় আসবে।
ভুকশিমইল গ্রামের হাজী তারা মিয়া, আমিন উদ্দিন, ইলাছ মিয়া, মহেষগৌরী গ্রামের নামর আলী, আজাদ মিয়া, গৌড়করণ গ্রামের মজমিল মিয়া, সাবেক মেম্বার আব্দুল হারিছ, শওকত মিয়া, কুরবানপুর গ্রামের চিনু মিয়া জানান, এই এলাকার মানুষের একমাত্র কৃষি ক্ষেত বোরো। হাওর তীরের মানুষ হলেও পানি সংকটের কারণে প্রতিবছর বোরো চাষ ব্যাহত হয়। স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করে হতাশ হন এলাকার মানুষ। সেই হতাশা থেকে কিছু একটা করার জেদ চাপে মানুষের মনে। সেই থেকে পারস্পরিক যোগাযোগ করে ৫ গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নেন খাল খননের। জুড়ী উপজেলার কন্টিনালা থেকে হাওরের বুক চিরে দীর্ঘ ৭ কিলোমিটারের বেশি খাল খনন কাজ স্বেচ্ছাশ্রমে করাটা দুরূহ কাজ। স্থানীয় লোকজন যারা প্রবাসে অবস্থান করছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং স্থানীয় লোকজন নামেন অর্থ সংগ্রহে। ভাল উদ্যোগকে সফল করতে দল, মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। শুরু হয় মাটি কাটার মেশিন (এস্কেবেটর) দিয়ে খনন কাজ। সেই সাথে কাজের সার্বক্ষণিক তদারকি জন্য প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লোক স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। দীর্ঘ ১৯দিন পর মানুষের স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করে। খাল দিয়ে যখন বুক সমান পানি আসছিলো, তখন কৃষকের বুকটাই যেন ভরে গিয়েছিলো আনন্দে।
সবার একটাই কথা এখন আর চোখের সামনে বোরো ক্ষেতে খরায় পুড়ে যাওয়া দেখতে হবে না। বরং মানুষ পতিত জমিকে বোরো আবাদের স্বপ্ন দেখছে। মানুষের মহতি উদ্যোগ পাল্টে দিতে পারে একটি এলাকার দৃশ্যপট। আর তাই প্রমাণ করলো কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ।