গ্রেফতার ও মামলা-হামলা আতংকে ॥ বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা লাপাত্তা

18

44bnp_49592কাজিরবাজার ডেস্ক :
লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি চললেও বিএনপির অধিকাংশ সিনিয়র নেতারা রয়েছেন আত্মগোপনে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার কার্যালয়ে গত ছয় দিন  ধরে অবরুদ্ধ। স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্যের দেখা মেলেনি কার্যালয়ের চৌহদ্দিতে। গ্রেফতার এড়াতে সবাই আত্মগোপনে রয়েছেন। নেতাদের এ অবস্থায় মাঠে নামছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরাও।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গ্রেফতারের পর থেকে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা নিজেদের রক্ষায় আত্মগোপনে চলে গেছেন।
বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি অনেকটাই নীরবে থেকে গা বাঁচিয়ে চলছেন। রফিকুল ইসলাম মিয়া বর্তমান তার নিজ বাসাতেই অবস্থান করছেন। দলের কোন কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যাচ্ছে না।
রফিকুল ইসলাম মিয়া সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্ষমতাসনীরা বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতার করছে। এমনকি রাজপথে নামলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি গুলি করছে। এই অবস্থায় কিভাবে রাজপথে নামবো, সেটা আপনারাই বলুন।
বিএনপির আরেক প্রভাবশালী নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ। স্থায়ী কমিটির এই সদস্য দলের দু:সময়ের অন্যতম কান্ডারি হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু বেগম জিয়া অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকে তাকেও রাজপথে দেখা যায়নি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তিনি দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে যাননি।
এই বিষয়ে হান্নান শাহ বলেন, ‘কেমন আছি এবং কোথায় আছি তা আমার চেয়ে সাংবাদিক বন্ধুরা ভালো জানেন। তাই এই বিষয়ে আমি আর কোন কথা বলতে চাই না।’
লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক প্রভাবশালী নেতা। তিনি বর্তমান তার গুলশান বাসভবনে অবস্থান করছেন। তবে গত ৭ দিনে দলীয় কোন কার্যক্রমে তাকে দেখা যায়নি। এমনকি বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হওয়ার পর তার সঙ্গে দেখাও করতে যাননি।
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা কেন দেখা করছেন না? জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজপথে নামলেই সরকারের আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। ফলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজপথে না থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে অচিরেই সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপির নেতারা রাজপথে নামবে।
তিনি বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিএনপির নেতা-কর্মীরা কার্যালয়মুখী হবেন। কিন্তু এর আগে কার্যালয়মুখী হলে সরকারের আজ্ঞাবহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হতে হবে।
এর আগে ৪ জানুয়ারি রাত থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বেগম খালেদা জিয়া এবং ৬ তারিখ বিকালে গ্রেফতার হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরেক শীর্ষনেতা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রয়েছেন আত্মগোপনে। এমতাবস্থায় দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সমন্বয়হীনতা।
বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের এই সঙ্কটাবস্থায় যাদের দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো তারা পুরোপুরি ব্যর্থ। তারা নিজেদের গাঁ বাঁচিয়ে চলছেন। গ্রেফতার হওয়ার ভয়কে অযুহাত দেখাচ্ছেন। রাজধানীতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এজন্য সাধারণ নেতাকর্মীরাও সাহস করে রাজপথে নামছেন না।
গত কয়েকদিনে একাধিকবার চেষ্টা করেও মির্জা আব্বাস এবং হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি দলের নেতা-কর্মীরাই তাদের হদিস পাচ্ছেন না। ফলে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সন্দেহ। দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
তবে এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ২ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আত্মগোপনকে বিএনপি আন্দোলনের নতুন কৌশল হিসাবে নিয়েছে। আর চেয়ারপারসনের নির্দেশেই নেতারা আত্মগোপন করেছেন। সময় হলেই তারা প্রকাশ্যে চলে আসবেন।