ফিরে দেখা ২০১৪ ॥ দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বছরে ৮টি খুন, নারী নির্যাতন, ডাকাতি, চুরি, মাদক, পুলিশ এসল্ট সহ ২৪৭টি মামলা

74

এম এম ইলিয়াছ আলী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে :
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২০১৪ সাল ছিল আলোচিত ও সমালোচিত। অনেক ঘটনা দিয়ে পার হল ২০১৪ সাল। ২০১৪ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় ৮টি খুন হয়। বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক আন্দোলন, নারী ও শিশু নির্যাতন, মারামারি, ডাকাতি, চুরি, মাদক, পুলিশ এসল্ট মামলা সহ মোট ২৪৭ টি মামলা হয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে মোট ৮টি খুন এবং খুনের মামলা হয় ৬টি, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় মামলা হয় ২৪টি, ডাকাতি মামলা হয় ১টি, চুরি মামলা হয় ১৪টি, মাদক ও চুরা চালান আইনে মামলা হয় ৪৮টি, মারামারি সহ অন্যান্য মামলা হয় ১৪৮টি, অস্ত্র আইনে মামলা হয় ৪টি, পুলিশ এসল্ট মামলা হয় ২টি। ২০১৪ সালে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় মোট মামলা হয় ২৪৭ টি।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, উপজেলার সদরপুর নামক স্থানে গত ১৯ মার্চ ২০১৪ ইং তারিখে অজ্ঞাত নাম ৩দিনের শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়, পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এস আই মোনায়েম মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৬, তারিখ -১৯.০৩.২০১৪।
গত ৬ এপ্রিল উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের কাড়ারাই গ্রামে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আজাদ মিয়া (৪২) নামে এক ব্যাক্তি নিহত হয়। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় আব্দুল মালিক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৭, তারিখ-০৬/০৪/২০১৪ইং।
গত ৪ মে উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের জয়সিদ্ধি গ্রামে উঠানে ধান শুকানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। নিহতের নাম মোঃ ছুরত আলী (৪৫) তিনি জয়সিদ্ধি গ্রামের মৃত কলমধর আলীর ছেলে। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় মজিদা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। থানার মামলা নং- ৪, তারিখ-০৪.০৫.২০১৪ইং।
গত ১৩ জুন উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের পুরান জাহানপুর গ্রামের সংঘর্ষে ১জন নিহত হয়। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় আব্দুল আজিজ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১০, তারিখ-১৩.০৬.২০১৪ইং।
গত ২১ সেপ্টেম্বর উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে পিতা, স্ত্রী ও ২ বছরের মেয়ে শিশুকে হত্যা করেছে পাষন্ড আলফু মিয়া । নিহতরা হলেন, পাষন্ডের পিতা আলা উদ্দিন (৭০), পাষন্ডের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩০) ও মেয়ে আফিফা (৯)কে নিজ বসত ঘরে টিউবওয়েলের হাতল দিয়ে আঘাত করলে ৩জনই ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় মোঃ শাহজাহান মিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা নং-১৬, ২১.০৯.২০১৪ইং।
গত ৫ নভেম্বর উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের পাইকাপন গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষে পাইকাপন গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে তফাজ্জুল হোসেন (৪৫) নিহত হয়। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় নজমুল হোসেন বাদী হয়ে ২৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৯, তারিখ-০৫.১১.২০১৪ইং।
এদিকে ২৫ আগষ্ট উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ বাজারে ৯ ভাই অটো রাইছ মিলে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এস আই আকিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ছ) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২০, তাং ২৫/০৮/২০১৪ইং।
গত ১০ অক্টোবর উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের কামরুপদলং গ্রামে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দু’গ্র“পের সংঘর্ষে আহত হয়েছিল ৪০ জন, এবং দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র সহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছিল। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এসআই বেদদুলাল ধর ও এসআই আব্দুল মুকিত চৌধুরী বাদী হয়ে উভয় গ্র“পের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক ভাবে ৯ জন ও ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২০/২৫ করে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৯ ও ১০, তাং ১০/১০/২০১৪ইং।
গত ৫ ডিসেম্বর উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের ছালেক উদ্দিনের ছেলে রাসেল মিয়াকে অত্যাধুনিক ছুরা সহ সুনামগঞ্জ র‌্যাব এর একটি দল গ্রেফতার করে। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় সুনামগঞ্জ র‌্যাব ৯ এর ডিএডি মাজিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করেন। মামলা নং-০৪, তারিখ-০৫.১২.২০১৪ইং।
অপরদিকে ৩ অক্টোবর উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের ছালেক উদ্দিনের ছেলে রাসেল মিয়াকে একটি মামলায় গ্রেফতার করতে গেলে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার এসআই আকিকুল ইসলাম’এর উপর আক্রমণ করে তার হাতে ছুরিকাঘাত করলে এসআই আকিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় এসআই আকিকুল ইসলাম বাদী হয়ে রাসেল সহ ১৪জনকে আসামী করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০১, তারিখ-০৩.১০.২০১৪ইং।
গত ২০ নভেম্বর উপজেলার পাগলা বাজারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’পক্ষের নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষ থামাতে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে থানার এসআই মাজহারুল ইসলাম আহত হন। পরে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানায় এসআই মাজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপির দু’গ্রুগের ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দুই শত/আড়াই শত জন নেতা কর্মীদের আসামী করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১১, তারিখ-২০.১১.২০১৪ইং।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল-আমিন এ প্রতিবেদককে বলেন, বিগত বছর ২০১৪ সালে যে খুন গুলো হয়েছে তা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই অধিকাংশটাই হয়েছে। তবে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভাল ছিল, আগামীতে আরও ভাল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।