শীর্ষ থেকে তৃণমূল মামলায় কাবু বিএনপি

39

bnp logo_48048_0কাজিরবাজার ডেস্ক :
একের পর এক মামলা-মোকদ্দমায় চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা বিএনপির। প্রতিদিনই নেতাদের মামলা হাজিরা দিতে হয়। দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতাদের একই অবস্থা। এক একেজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা হয়েছে। ফলে গড়পড়তায় তাদের প্রতিদিনই মামলায় হাজিরা দিতে হয়। এ কারণে অনেকেই আত্মগোপনে থাকেন। আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যে থাকলেও কোনো কার্যক্রমে শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন না।
এসব কারণে জানুয়ারিতে সরকার বিরোধী আন্দোলন নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২৩ জানুয়ারি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি। কারণ নামে- বেনামে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধেই ৫৯টি মামলা রয়েছে। আর যারা রাজনীতি করে তারাই একমাত্র এই পরিস্থিতির বিষয়ে বুঝতে পারবে, অন্য কেউ নয়।
একই দিন নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সারাদেশে বিএনপির ৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩ হাজার মামলা দায়ের করেছে। বিএনপিকে রাজনীতি ও আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এই মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপিকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে মামলা-মোকদ্দমাকে সরকারের একটি অপকৌশল বলছেন দলটির অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। প্রায় একই সুরে তৃণমূলের কর্মীরা বলেন, নেতারা আন্দোলন করবেন কি করে, তারা তো মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েই সময় পান না। সরকার তাদের এবং বিএনপিকে মামলায় ব্যস্ত রেখেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিলো। বুধবার এই মামলায় বেগম জিয়া হাজিরা দিলেও আবার ৭ জানুয়ারি এই মামলা দুটির জন্য তাকে আদালতে যেতে হবে।
এ ঘটনায় গত (বুধবার) বকশিবাজার মাঠে সংঘর্ষ ঘটে। সেই সংঘর্ষের ঘটনায়ও বিএনপি বেশ কয়েক জন শীর্ষ নেতাসহ দেড়শতাধিক নেতার নামে দুইটি মামলা করেছে পুলিশ।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির ৪৬ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল হরতাল চলাকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলার অন্য আসামিরা হলেন, এমকে আনোয়ার, আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান রতন, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম মজনু, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, বিএনপি নেতা ও ৪০ নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, বিএনপির সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, ঢাকার খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কমিশনার ইউনুস মৃধা, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল খান শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দল মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি মান্নান হোসেন শাহীন, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার যুগ্ম-সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির প্রমুখ।
এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ আরো ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। গাড়ী ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধা, মারধর করে জনমনে অতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনের ৪/৫ ধারায় ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ মামলাটিতে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি ভাংচুর ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ৪৪ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করা হয়।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন, মওদুদ আহমেদ, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে সকল স্বৈরাচার সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতে মামলা করেছে। কিন্তু ইতিহাস বলে মামলা দিয়ে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেই দমানো যায় না। যা আমরা পূর্বেও দেখেছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, জিয়া পরিবারকে নির্মূল করতে ও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাগুলো দিচ্ছে। তবে মামলা দিয়ে বিএনপিকে রাজনীতি ও আন্দোলন থেকে সরানো যাবে না।