আদালতে সৎ ভাইর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ॥ পারিবারিক কলহের কারণেই খুন হন স্কুলছাত্রী সালমা

38

স্টাফ রিপোর্টার :
শহরতলীর খাদিমনগর ইউনিয়নের বাঘমারা টিলা থেকে উদ্ধার হওয়া স্কুলছাত্রী সালমা আক্তার (১০)’র লাশের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পারিবারিক কলহের কারণে সৎ বোন সালমাকে বাঘামারা টিলায় নিয়ে লতা-পাতা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে সালমার সৎ ভাই জাবেদ মিয়া (১৮) এভাবে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। আদালতের বিচারক মোঃ সায়েদুল করিম ফৌজদারী কায্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেবর্ড করেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে শাহপরান থানার এসআই হুমায়ুন কবির শহরতলীর লাখাউড়া থেকে জাবেদ মিয়াকে গ্রেফতার করে গতকাল উল্লেখিত আদালতে হাজির করেন। এ সময় সে স্বেচ্ছায় ওই আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। ধৃত জাবেদ এয়ারপোর্ট থানার লাখাউড়া এলাকার ভাটা গ্রামের মফিজ আলীর পুত্র।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহপরান থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির জানান, গতকাল দুপুরে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ সায়েদুল করিমের আদালতে জাবেদ মিয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সে উল্লেখ করে, তার পিতা ৩ বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী তার মা। তৃতীয় স্ত্রীর সন্তান স্কুলছাত্রী সালমা আক্তারের। সালমার মা মারা যান। সৎ মায়ের জ্বালাতন সহ্য করতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে জাবেদ গত ১৪ নভেম্বর দুপুরের দিকে সালমাকে বাঘামারা টিলায় নিয়ে যাই। সেখানে পারিবারিক কলহের কারণে সালমা আক্তারকে লতা-পাতা দিয়ে সে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে ফেলে আসে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মত ঘরে পড়তে বসে সালমা। গত ১৪ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে তার কক্ষে খোঁজ নিয়ে সালমাকে পাওয়া যায়নি। এরপর তার খোঁজে বের হন পরিবারের সদস্যরা। এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করেন তারা। তাকে নিখোঁজের ৪ দিন অতিবাহিত হলেও কোথাও সন্ধান মিলছিল না সালমার। শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সালমার ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা পার্শ¦বর্তী বাঘমারা টিলায় খোঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে টিলার এক জায়গায় গিয়ে সালমার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সালমার মরদেহে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। শরীরে কোন কাপড় নেই। ফ্রক একটি গাছের ঢালে এবং সেলোয়ার কয়েক গজ দূরে ফেলা। এছাড়া, নাড়িভুঁড়ি কুকুর বা শেয়াল ছিঁড়ে নিয়েছে। খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট থানার সহকারী কমিশনার ও থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সালমার পিতা মফিজ আলী ব্যক্তিগত জীবনে ৩টি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরের একটি মেয়ে, ২য় স্ত্রীর এক ছেলে ও ৩য় স্ত্রীর এক মাত্র মেয়ে ছিল সালমা। সেই সালমাই খুন হন দুর্বৃত্তদের হাতে। তার গলায় গাছের লতা পেঁচানো ছিল। তবে এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় হতবাক হয়ে যান এলাকাবাসী। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে  ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। নিহত সালমা আক্তার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। এ ঘটনায় নিহত সালমার পিতা মফিজ আলী বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে শাহপরান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ১৩ (২১-১১-১৪)।