বর্ধমান বিস্ফোরণ ॥ ৩৪ জঙ্গির তালিকা দিল ভারতীয় প্রতিনিধি দল

38

national_investigation_agency_of_india_951027999111কাজিরবাজার ডেস্ক :
বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণ ও অন্য দু’টি জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত বলে সন্দেহভাজন ৩৪ জঙ্গির তালিকা দিয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) প্রতিনিধি দল।
গতকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এনআইএ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে এ তালিকা দেওয়া হয়।
ছয় সদস্যের এনআইএ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, তারা আমাদের অল্প সংখ্যক জঙ্গির তালিকা দিয়েছেন। তবে ওই জঙ্গিরা বাংলাদেশের না অন্য কোনো জায়গার তা নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে আমরা তাদের সার্বিকভ সহযোগিতা দেব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণ ও অন্য দু’টি ঘটনায় ওপেন সোর্স থেকে পাওয়া বেশ কিছু তথ্য ও অফিসিয়ালি পাওয়া তথ্য আমরা যাচাই করছি। সেখানে বেশ কিছু নাম বেরিয়ে এসেছে, তারা বাংলাদেশের নাগরিকও হতে পারেন, আবার ভারতের নাগরিকও হতে পারেন।
মনিরুল বলেন, তারা নামের বিষয়ে কথা বলেছেন। নামগুলো আমরা যাচাই করবো। পাশাপাশি দু’দেশে জেএমবি বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে যাতে না পারে, এপারে বা ওপারে কোনো ধরনের শেল্টার বা ঘাঁটি গড়তে যাতে না পারে সেলক্ষ্যে সমন্বিত উপায়ে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে কথা বলেছি।
কতোগুলো নাম তারা দিয়েছেন? — এ প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, অল্পসংখ্যক নাম তারা দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশ না ভারতের নাগরিক সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। আমাদের কাছেও কিছু নাম আছে, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে যারা পলাতকও রয়েছেন তাদের সঙ্গে মিল খোঁজার চেষ্টা করবো।
‘অর্ধশতাধিক নাম দেওয়া হয়েছে কি?’–জানতে চাইলে তিনি ফের বলেন, ‘অল্প সংখ্যক। যা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো আমরা যাচাই করে দেখবো।’
তারা কোনো দালিলিক প্রমাণ দিতে পেরেছেন কি-না জানতে চাওয়া হলে জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। যে নামগুলো পেয়েছি, সেগুলো আমরা যাচাই করবো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যেসব জঙ্গি-আসামি ছিনতাই হয়েছে, তাদের বিষয়েও আমরা যাচাই করছি।
ভারতের প্রতিনিধি দল তদন্ত করবে কিনা জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, তারা চলে যাবেন। তদন্ত একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিরাই করে থাকেন। আমরা একমত যে, জেএমবি বা অন্য কোনো সংগঠন যেন অপরাধ কর্মকাণ্ড করতে না পারে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র সেজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করবে।
এর আগে বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান জানিয়েছিলেন, ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) প্রতিনিধিদলকে জঙ্গি খুঁজতে সহায়তা এবং জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য বিনিময়ে জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ৬ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়।
সোমবার সকালে ভারতীয় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান এনআইএ’র ডিজি শারদ কুমার এবং উপ-মহাপরিদর্শক সাজেদ ফরিদ রয়েছেন।
দুপর আড়াইটায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সন্ধ্যায় বৈঠক শেষ হয়।
দুই দেশের প্রতিনিধিদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র সচিব ওই সময় বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ ৬ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছি। আমাদের দেশে যদি কোনো দুষ্কৃতকারী থাকে তাহলে আমরা আইনানুগ সহযোগিতা দেবো। আমাদের কমিটি ভারতের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলবে।
স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাদের সমস্যা আমরা দেখবো। আমরা চাই না আমাদের দেশে বা ভারতে কোনো জঙ্গি থাকুক; এরা দেশের শত্রু, সাধারণ মানুষ ও জনগণের শত্র“।
ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশেই দুষ্কৃতিকারী রয়েছে। কাজেই তাদের খুঁজে বের করা দরকার। তারা মনে করেন, বাংলাদেশে দুষ্কৃতকারী রয়েছে। এনআইএ প্রতিনিধি দলের এ আবেদনটি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এটিকে গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করছি।
গত ২ অক্টোবর বর্ধমানে বিস্ফোরণে বাংলাভাষী দুই ব্যক্তি জড়িত বলে সন্দেহের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার তদন্তভার দেয় রাজ্যের সিআইডি পুলিশের হাতে। তখন সিআইডি তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে তদন্তের দায়িত্ব এনআই’র কাছে অর্পণের উদ্যোগ নেয় ভারত।
গত ৬ অক্টোবর ভারতের দৈনিক ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’ প্রচার করে যে, বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণে বাংলাদেশি জঙ্গিরা জড়িত। এ ঘটনার পর ভারতের কাছে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার তথ্য চায় বাংলাদেশ। তবে দীর্ঘদিনেও তথ্য দেয়নি ভারত।
শেষ পর্যন্ত জঙ্গি সম্পৃক্ততার খোঁজ করতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় ভারত সরকার। সোমবার ঢাকায় পৌঁছে স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে এনআইএ প্রতিনিধি দল।