কমলগঞ্জে ১০ মাসে ১৯ জনের আত্মহত্যা ॥ অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন

50

sucide_photo_42100_0কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। নারী-পুরুষ, গৃহবধূ, উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে শিশুরা পর্যন্ত বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। গত ১০ মাসে ১৯ জন গলায় ফাঁস ও কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। সামান্য অজুহাত বা হতাশা থেকে তাদের ভেতর জন্ম নিচ্ছে আত্মহত্যা নামক ভয়ঙ্কর অপরাধের উপসর্গ। এ প্রবণতায় অভিভাবকমহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার, রহিমপুর, পতনউষার, আদমপুর, শমসেরনগর, আলীনগর, কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আশংকাজনক ভাবে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যা। গত ১০ মাসে প্রায় ১৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। যা প্রতিমাসে গড়ে ২টি। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর শুক্রবার শমসেরনগরের বিএএফ শাহীন কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শাহরিয়ার হোসেন (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে বাসার ফ্যানে আত্মহত্যা করে। একই দিন দুপুরে আলীনগর ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামের থাবা উদ্দিনের যুবতী কন্যা হুসনা বেগম(১৮) বিষপানে আত্মহত্যা করে। এছাড়া গত ১৯ অক্টোবর রাতে বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তারেক হোসেন খান(১৮) বিমান বাহিনীর কোয়ার্টারে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।  ২০ অক্টোবর দিবাগত রাত ১টায় আদমপুরের মধ্যভাগ গ্রামে কীটনাশক খেয়ে গৃহবধূ রেজিয়া বেগম(২৫), ১৩ অক্টোবর মুন্সিবাজারের সুরানন্দপুর গ্রামের দুই সন্তানের জননী তমিজা বেগম (৩৫), ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে পতনঊষার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণউষার গ্রামে মৃত কুতুব মিয়ার মেয়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী ইমা বেগম(১৪), ২৪ সেপ্টেম্বর আদমপুরে কোনাগাঁও গ্রামের রাজিব মিয়ার ছেলে আলম আলী (২০), ২৭ আগষ্ট রাতে কমলগঞ্জের শমসেরনগর চা বাগানে চা শ্রমিক ৬ মাসের অন্ত:সত্ত্বা গৃহবধূ পার্বতী রাজভর, ২ আগষ্ট রহিমপুর ইউনিয়নের বনবিঞ্চুপুর গ্রামে গণেশ মালাকারের মেয়ে ছয়ছিড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালযের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী শেলী রানী দাস (১৩), ২৯ জুলাই পৌর এলাকার গোপালনগর গ্রামে ঈদের দিন বিবাহিত যুবক মোঃ মুক্তার আলী (২৫), ১৪ জুলাই আলী নগর চা বাগানের পাক্কা লাইনে গৃহ বধু শান্তি নায়েক (২২), ২৬ মার্চ পতনউষার ইউনিয়নের টিলাগড় আব্দুল কাদিরের মেয়ে সাকি বেগম (১৬), ২০ মার্চ আলীনগর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর গ্রামের মৃত আব্দুল রউফ চৌধুরীর ছেলে মানসিক রোগী রুমান চৌধুরী (২২), ৯ এপ্রিল কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লঙ্গুরপাড় গ্রামের এনাম মিয়ার মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সুমনা বেগম(১০), ৪ জুন সকালে আলীনগরের কামুদপুর গ্রামে মন্নান মিয়ার বিবাহিত মেয়ে সীমা বেগম (২২), একই দিন ৪ জুন উপজেলার শমসেরনগর ইউনিযনের ভাদাইল দেউল গ্রামের ইউনুস মিয়ার ছেলে লিডিং ইউনিভাসির্টির ছাত্র রুবেল মিয়া(২২), ৮ ফেব্র“য়ারী রহিমপুর ইউনিয়নের মৃত্তিঙ্গা চা বাগানের ২২ নং সেকশনের ভিমশাড়ি উড়াং (১৬) ও জাগনী গৌড় (১৮)  নামে দুই চা কন্যা কালাছড়া ফরেষ্ট এলাকায় একই গাছে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
আত্মহত্যার বিষয়ে শমসেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক হারুন অর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, আত্মহত্যা একটি ব্যাধি। জীবনে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই অনেকেই আবেগ তাড়িত হয়ে আত্মহত্যা করে তাকে। এটা সামাজিকভাবে রুখতে হবে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) বদরুল হাসান বলেন, থানায় অপমৃত্যু দায়ের পর তদন্ত করে প্রেম, হতাশার কারণ পাওয়া যায়। তা রোধ করতে হলে সামাজিকভাবে হত্যার কুফল অবগত করতে হবে।