লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দাদের নারকীয় অভিজ্ঞতা

5

 

কাজির বাজার ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে দ্রæত ছড়িয়ে পড়তে থাকা দাবানল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের ইতিহাসে এরকম দাবানল আর একটাও ঘটেনি। আগ্রাসী আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে লাখো ঘরবাড়ি ও বিষয়-সম্পত্তি। আগুনে সব নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখাই শুধু নয়, লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে গিয়ে যানজট, প্রকট ধোঁয়ায় শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসাসহ নানা জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।
বিবিসি বলছে, এবারকার দাবানল পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসকে যেন তছনছ করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়ি ঘর ছেড়েছেন এবং দাবানলে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে আগুন, ধোঁয়া ও ধ্বংসাবশেষের মাঝেও অন্য যে প্রসঙ্গটি বারবার উঠে এসেছেÑতা হলো উদ্ধার তৎপরতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। দাবানলের ঘটনায় লস অ্যাঞ্জেলেস কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারির পাশাপাশি বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে যাওয়ার আদেশ জারি করলে বাসিন্দারা দ্রæত সাড়া দেন।
অনেকে সরকারি আদেশ পাওয়ার আগেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যান। তবে তারা খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। তারা যখন এলাকা ছেড়ে নিরাপদে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তখন রাস্তায় তাদের গতি খুবই ধীর ছিল।
বুধবার প্যাসিফিক প্যালিসেডস এলাকার বাসিন্দারা যখন পালাচ্ছিলেন, তখন মালিবুর দিকে যাওয়া প্রধান সড়ক প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে যানজটের কবলে পড়ে। অনেক মানুষ রাস্তায় তাদের গাড়ি রেখেই সামনে হেঁটে হেঁটে আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। এদিকে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে সেই পরিত্যক্ত গাড়ির জটে পড়লে তারা রাস্তা ফাঁকা করতে বুলডোজার ব্যবহার করেন। একজন বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, প্যালিসেডসের আগুন থেকে বাঁচতে তিনি দুই ঘণ্টা ধরে যানজটে আটকে ছিলেন। প্যাসিফিক প্যালিসেডস কমিউনিটি কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান মারিয়াম জার জানান, আগুনের কারণে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এই গাড়িগুলোর বাধার মুখে পড়ি। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কেউই চলাচল করতে পারেনি এবং আমি ৪৫ মিনিট ধরে রাস্তায় আটকে ছিলাম।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনবার তাকে সরে যেতে হয়েছিল। প্রবল বাতাসের কারণে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছিল এবং আশেপাশের এলাকায় ভয়াবহ গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। তিনি বলেছেন, এটি সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ, এক নারকীয় পরিস্থিতি।
মারিয়াম জার আরও জানান, সেখানকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও সংকটের আরেকটি কারণ।
তিনি বলেছেন, সেখানে প্রধান সড়ক দুটি, আর সরু আরেকটি রাস্তা। এই তিনটি পথ ধরেই আপনাকে প্যালিসেডস থেকে বের হতে হবে। যেকোনো সময় যানজট লেগে সড়ক বন্ধ হয়ে যাবে আর আগুন আমাদের শেষ করে দেবে এটা আমাদের চিরাচরিত ভয়। ওই এলাকা থেকে সবাইকে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সরানো সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি জানান।