আসছে ভয়ংকর কালবৈশাখী

17

সিন্টু রঞ্জন চন্দ
আজ বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত (৩০ ও ৩১ মার্চ এবং ১ এপ্রিল) দেশব্যাপী শক্তিশালী কালবৈশাখী, তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি এই সপ্তাহের মধ্যেই চলতি মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় সিলেটসহ দেশের বেশিসংখ্যক জেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে।
ঋতু পরিক্রমায় চৈত্র ছুঁলেও প্রকৃতিকে এখনো তীব্র খরতাপ অধিকার করতে পারেনি। বসন্তের নরম হাওয়া, এই মেঘ, এই রোদ্দুর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বছরের এই সময়টায় সাধারণত দিনে প্রখর রোদ থাকে, বিকাল গড়াতেই দমকা হাওয়া ও কালবৈশাখী শুরু হয়। সঙ্গে এক পশলা বৃষ্টিও ঝরে। কিন্তু এ বছর খেয়ালি আবহাওয়ার কবলে পড়েছে প্রকৃতি। প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে সূর্য ও মেঘের মধ্যে যেন লড়াই চলছে। সূর্য তার দশপ্রহরণ ছড়াতে না ছড়াতেই মেঘ এসে তাকে ঢেকে দিচ্ছে। কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিও ঝরছে। কিন্তু দমকা হাওয়া তেমন গতি না পাওয়ায় তা কালবৈশাখীতে পরিণত হতে পারছে না। তবে এই পরিস্থিতি আর থাকবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মৌসুমের সবচেয়ে ভয়ংকর কালবৈশাখী ঝড় কয়েক দিনের মধ্যেই দেশে আঘাত হানতে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
৩১ মার্চ পুরো বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী, ব্যাপক শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের আশঙ্কা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত। এই দিন বজ্রপাতে অধিক সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। যদিও বাংলাদেশে গত দশকে টর্নেডোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। তবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় টর্নেডোর আশঙ্কা রয়েছে এই দিনে। ঝড় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছেÑচুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজবাড়ী, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ। ৩০ মার্চ ও ১ এপ্রিল রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে শক্তিশালী কালবৈশাখী ব্যাপক পরিমাণ শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ১ এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা, বরিশাল, ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে। তিনি বলেন, ৩১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী কমবেশি কালবৈশাখী, তীব্র বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, টানা তীব্র রোদ থাকলে সন্ধ্যার পর জলীয় বাষ্প বেড়ে সাধারণত কালবৈশাখী তৈরি হয়। এবার এ ধরনের টানা রোদের দেখা মিলছে না। বরং দিনের বেলায় আকাশে সামান্য মেঘ এসে রোদের তীব্রতা কমিয়ে দিচ্ছে। আজ ২৯ মার্চ থেকে বৃষ্টি বেড়ে এপ্রিলের শুরুতে কালবৈশাখী এবং বজ্রপাত বাড়তে পারে।
রাজশাহীতে টানা তিন দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড : দেশের অন্যান্য স্থানে তাপমাত্রার হেরফের হলেও তাপপ্রবাহে পুড়ছে পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহী। একে তো রোজা, তার ওপর কাঠফাটা রোদ। প্রচÐ গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা নগরবাসীর। টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ। গত রোববার রাজশাহীর তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার বিকালে রাজশাহীতে ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে আরো বেশ কয়েক দিন এমন তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ সময়ের মধ্যে ঝড়, বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।