সিলেটে আরও চার মামলা

16

অঅবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী-এমপি-মেয়র, আ.লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ ৪৫০ জন আসামী

সিন্টু রঞ্জন চন্দ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি, সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেট নগরীতে দু’টি, কানাইঘাটে একটি ও মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী থানায় পৃথক পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আসামী করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিসিকের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ ৪৫০ জন নেতাকর্মী।
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় করা হয়েছে। শনিবার রাতে নগরীর লোহারপাড়া আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা আব্দুল মতিন বাদি হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামি হিসেবে ৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ও অজ্ঞাত রাখা হয়েছে ৪০-৫০ জনকে। সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুনু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য কয়েকজন আসামিরা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরী, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ (ভিপি শামীম), মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ। এছাড়াও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাকে আসামি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিলেটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে কানাইঘাটে পুলিশের মামলা : অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে সিলেটে মামলা হয়েছে। রবিবার ২৫ আগস্ট রাতে পুলিশ বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় মামলা করে। পাসপোর্ট আইনে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টার দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার।
এর আগে গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে অবৈধভাবে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিচারপতি মানিককে আটক করে বিজিবি। পরে শনিবার বিকাল ৪টায় দিকে পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করে। আদালত ৫৪ ধারায় বিচারপতি মানিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে হাজির করার সময় উত্তেজিত জনতা তার উপর ডিম ও জুতা নিক্ষেপ এবং শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়। বিচারপতি মানিক স্পর্শকাতর অঙ্গে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সম্প্রতি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় মানিকের নামে নোয়াখালীর আদালতে মামলা হয়েছে। একই অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে আইনজীবী মো. জিয়াউল হক বাদী হয়ে আরেকটি মামলার আবেদন করেন। আদালত অভিযোগটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি মানিক নানা বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকাÐের কারণে আলোচিত-সমালোচিত।
মিরবক্সটুলায় হামলা-গুলির ঘটনায় ১৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট রবিবার নগরীর মিরবক্সটুলাস্থ সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে হামলা-গুলির অভিযোগে সিলেট কোতোয়ালী মডেল থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার নগরীর চারাদিঘীরপাড় এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে রুবেল আহমেদ (৩৫) বাদি হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় মামলায় তিনি সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সাংসদ শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিব, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ রনজিত সরকারসহ ৮৬ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোতোয়ালী মডেল থানায় বিস্ফোরক উপাদানাবলী আইন এবং দÐবিধির বিভিন্ন ধারায় এই মামলা দায়ের হয়েছে।
জুড়ীতে ১৮৩ জন আ.লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ছাত্রশিবিরের মামলা : মৌলভীবাজারের জুড়ীতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৬৩ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০০/১২০ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা (নং- ০৭, তারিখ- ২৬.৮.২০২৪, ধারা- ১৪৩/ ৩২৩/ ৩২৬/ ৩০৭/ ১১৪/ ৫০৬/ ৩৪) হয়েছে।
মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বিরইনতলা গ্রামের মৃত মানিক মিয়ার ছেলে তারেক মিয়া। তিনি উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বলে জানা যায়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়- সরকারি চাকুরী ব্যবস্থায় বৈষম্যের কারণে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এক দফা দাবীতে অসহযোগ আন্দোলনের সময় গত ০৩/০৮/২৪ইং দুপুর ৩ টায় জুড়ীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরে মিছিল শেষে ভবানীগঞ্জ বাজারস্থ নিউ মার্কেটের সামনে পৌছিলে আসামীগণ দা, হকিস্টিক, চায়নিজ কুড়াল, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে গণহত্যার জন্য এলোপাতাড়ী মারপিট করে। এতে রক্তাক্ত আহতরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মামলার আসামীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মাসুক মিয়া, সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি, সদ্য সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল রানা, পশ্চিম জুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আনফর আলী, সাগরনাল ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুন নুর, জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাহাব উদ্দিন সাবেল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ, সাইদুল ইসলাম, শেখরুল ইসলাম, হুমায়ূন রশীদ রাজী, সিদ্দিকুর রহমান সুমন, সাইদুর রহমান, হাবিবুর রহমান জয়, এ আর সাজেদ, গিয়াস উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম, কামরুল হাসান নোমান, সানাউল হক শাওন, শাহ আলম, নুরুজ্জামান শিপলু, বেলাল আহমদ, আশফাক আহমেদ আদনান, জবলু মিয়া, নিয়াজুল ইসলাম নিজু, আব্দুল আজিজ রুয়েদ, আহমদ আবির মামুন, সুমন পারভেজ, আল আমিন, হুমায়ুন রশীদ, তাওহিদ মোশারফ, এনামুল হক, সালমান আফরাজ, আমিনুল ইসলাম জাবেদ, খায়রুজ্জামান, আব্দুস সাত্তার, তারেক হাসান, জামাল উদ্দিন, সানি পান্ডে, সাহাব উদ্দিন সামছু, নাসিম উদ্দিন, ইনসাফ আহমেদ, আবুল সাইম শাহীন, মামুনুর রশীদ, আলিম উদ্দিন, সহিদুর রহমান জুয়েল, ফারুক আহমেদ, আহমেদ ইমরুল অভি কানন, আবু বকর সিদ্দিক, নাসিম উদ্দিন, সাইফুর রহমান, মেহেদী হাসান, জায়েদ আহমদ, সুমেল, আসুক মিয়া, তাপস দাস, শাকিল আহমেদ, রাব্বি আহমেদ, আতিকুর রহমান, শাহরিয়ার মাহবুব ও আফজালুল হক টনি।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন- তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।