ভারত পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে

3

সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মির্জা ফখরুল

মো. আব্দুল হাছিব
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারত পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ভারতে উজান থেকে অসময়ে ছেড়ে দেওয়া পানিতে আজ বাংলাদেশের একটা অংশ ভয়াবহ বন্যায় পতিত হয়েছে। গত ১৫বছরে এ রকম বন্যা দেখিনি, ত্রিপুরা থেকে খুব বেশি পানি আসছে। বৃষ্টি হচ্ছে বা হতে পারে সেই বৃষ্টির পানিতে এ রকম বন্যার সৃষ্টি হয় না। ভারত উজানের দেশ ও আমরা ভাটির দেশ, সেই হিসেবে তাদের দায়িত্ব রয়েছে। উজান থেকে বেশির ভাগ পানি ভারত থেকে আসছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল রবিবার সিলেট বিমানবন্দর সড়কের একটি অভিজাত হোটেলে সিলেট কর্মরত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, সিলেটেও ভারত টিপাইমুখী বাঁধ নির্মাণ করতে ছেয়েছিলো ভারত। সেই সময়ে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী প্রতিবাদ করেছেন ও আন্দোলন করেছেন। যার কারনে তিনি গুমের শিকার হয়েছেন বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করি ইলিয়াস আলীসহ নেতৃবৃন্দ আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।
মতবিনিময়কালে তিনি আরও বলেন ৫ই আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নতুন এক বাংলাদেশের নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি মানুষের আকাঙ্খা সকল জঞ্জালগুলো সরিয়ে দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং মানুষের অধিকার সাম্য, ন্যায় বিচার, মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করে একাত্তরের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে হবে। শেখ হাসিনা ২০১২সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে তখনই ফ্যাসিবাদের দিকে অগ্রসর হন। রাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, আদালত, মিডিয়া সহ সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। সীমাহীন দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা কখনো গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাননি, তিনি বার বার বিনা ভোটের নির্বাচনের আয়োজন করে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রেখেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে বাংলাদেশ যখন নতুন করে দাড়াবার চেষ্টা করছে তখন শেখ হাসিনা ভারতে বসে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি বিগত দিনের বিএনপির উপর হামলা, মামলা, খুন, গুম নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন বিএনপির ৬০লক্ষ নেতাকমীদের মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ইলিয়াস আলী সহ ৭শত নেতাকর্মী গুম অবস্থায় রয়েছেন।
মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব গণঅভ্যুত্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখায় ছাত্রদের বিশেষ ধন্যবাদ জানান। বর্তমানে বন্যায় ছাত্রসহ সারাদেশের মানুষ পানিবন্দী মানুষের পাশে দাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সবার কাছে গ্রহনযোগ্য, বরেণ্য ও দেশ বিদেশে সুপরিচিত ড. ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তর্ভর্তীকালীন সরকার সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে দ্রæত নিরপেক্ষ ও অবাধ একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। সিলেটের সাংবাদিক আবু তুরাবকে পুলিশ গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সারা দেশে আমাদের সন্তানেরা রাজপথে রক্ত দিয়েছে, শেখ হাসিনার হাত থেকে শিশুরাও রক্ষা পায়নি। সকল হত্যার বিচার হবে। আমরা সরকারকে সময় দিতে চাই, আমরা সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে চাই।
প্রতিটি বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা উত্তরন করতে সময়ের প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা দ্রæত উন্নতি হচ্ছে। যারা সময় সুযোগ নিয়ে অন্যায় বা অপরাধ করছে তারা দুর্বৃত্ত। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। যদি আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মীদের কোনো অপরাধের সংশ্লিষ্টতা থাকে তাহলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করবেন, আমরাও কেন্দ্র থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ্ সিদ্দিকী। এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমূখ।
এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একদিনের এক সংক্ষিপ্ত সফরে সিলেটে আসেন। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ঢাকা থেকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সফরকালে বিএনপি মহাসচিবের সহধর্মিণীও সাথে সিলেট আসেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত ও এরপর তিনি হযরত শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন। মাজার জিয়ারতকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, আরাফাত রহমান কোকো, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত করেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। এসময় দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।