দুর্নীতির লাগাম টানতেই হবে সবারই চাওয়া দুর্নীতিমুক্ত দেশ

11

বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রæত এগিয়ে চলেছে। কিন্তু দুর্নীতির যে ব্যাপকতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে সেই উন্নয়ন কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা। দুর্নীতির অক্টোপাস অনেক আগে থেকেই আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। সরকারি প্রশাসনের এমন কোনো ক্ষেত্র বোধ হয় নেই, যেখানে দুর্নীতি প্রবল আকারে ছড়িয়ে পড়েনি।
ঘুষ, দুর্নীতি ও অন্যান্য অনিয়ম আগেও ছিল।
সম্প্রতি দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘বিসিএস প্রিলি লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, এক যুগের বেশি সময় ধরে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছে একটি চক্র। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসকাÐ গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিসিএসসহ ৩০টি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে।
এতে পিএসসির কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়েছে। এ পর্যন্ত চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে শতকোটি টাকার বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি মনে করছে, প্রশ্ন ফাঁসের এই চক্রে শতাধিক দুর্নীতিবাজ জড়িত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির অন্তত ১৬ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পাওয়া গেছে। পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরো ১০ জন নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই করে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকলে তাঁদেরও পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
সিআইডি সূত্রে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ২০০২ সাল থেকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে কেউ না কেউ জড়িত ছিলেন।
দুর্নীতি নামের ব্যাধিটি নানা রূপে, নানাভাবে বিস্তার লাভ করছে। একসময় সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে যোগদানের আগে তাঁদের সম্পর্কে বিবরণ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা কি এখন আছে।
গত বৃস্পতিবার (১১ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ’দুর্নীতি দূর হোক। দেশ দুর্নীতিমুক্ত হোক।’ এটাই দেশের সব নাগরিকের মনের কথা। সবারই চাওয়া দুর্নীতিমুক্ত দেশ। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজের কারণে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা যাচ্ছে না।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থান সব সময়ই অত্যন্ত কঠোর। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সরকারি প্রকল্পে অনিয়মকারীরা অবসরে গেলেও পার পাবেন না। বিজ্ঞজনরা বলেন, কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না যদি দুর্নীতি এভাবে সর্বগ্রাসী রূপ নিতে থাকে। যেকোনো মূল্যে দুর্নীতির লাগাম টানতে হবে।