সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে মাছের আকাল বর্ষাতেও মিলছে না দেশি মাছ

3

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর

ভরা মৌসুমেও তাহিরপুরে হাওরে মিলছে না দেশী প্রজাতির মিঠা পানির মাছ। আষাঢ়, শ্রাবন ভাদ্র, আশি^ন ৪ মাস হাওওে কানায়, কানায় পানি পানি থাকার পরও চাষ কৃত মাছই ভরসা হাওর পারের বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের।
স্থানীয় গ্রামবাসী ও বাজার করতে আসা ক্রেতাদের অভিযোগ শুষ্ক মৌসুমে বিল, জলাশয় সেচ দেয়া, মাছের অভয়াশ্রম নষ্ট করা, কারেন্ট জাল, বেড়জাল, রিং চাই দিয়ে পোনা মাছ ধরার কারনে দিনে দিনে হাওরগুলো দেশী মাছ শুন্য হয়ে পড়েছে। টাঙ্গুয়া, শনি, মাটিয়ান হাওর সহ ২৩ টি ছোট বড় হাওর, নদী নালা, ডোবা জলাশয় এখন একই অবস্থা। জেলেদের জালে দেশী মাছ আর তেমন ধরা পড়ছে না। সামন্য কিছু মাছ ধরা পড়লেও সেগুলো বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে।
তাহিরপুর সদর বাজার, আনোয়ারপুর বাজার, কাউকান্দি বাজার, সোলেমানপুর বাজার সহ হাওরপারের বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায় দেশী প্রজাতির বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১ হাজার থেকে ১২শ, রুই মাছ ৮ শ থেকে ১ হাজার, বাইম মাছ ৭ শ থেকে ৯ শ, কালি বাউশ ৬ শ থেকে ৮ শ, টেংরা, ৩শ থেকে ৪ শ, টাকি ২শ ৫০ থেকে ৩শ, ঘনিয়া, ৩ শ ছোট চিংড়ি ৭ শ এবং ছোট মাছ ২শ ৫০ থেকে ৩শ টাকা।
বর্তমানে দেশি মাছের অতিরিক্তি মুল্য বৃদ্দির কারণে হাওর পারের অনেক ক্রেতাই অপেক্ষাকৃত কম দামের চাষের মাছ, পাঙ্গাস, কই, তেলাপিয়া, শরপুটি, শিং মাছ সহ বিভিন্ন মাছের প্রতি ঝুঁকছেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর পারের গ্রাম মন্দিয়াতা, গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাঞ্জু মিয়া জানান, হেমন্ত কিংবা বর্ষা কোনো মৌসুমেই এখন আর আগের মত দেশি মাছ পাওয়া যায় না। কদাচিৎ দু একটা পেলেও অতিরিক্ত দামের কারণে কেনা যায় না।
তাহিরপুর বাজার মাছ ব্যাবসায়ী জামালগড় গ্রামের শামছু মিয়া জানান, বর্ষকালেও হাওরে জেলেদের জালে তেমন মাছ ধরা পরে না। তাই মাসের অধিকাংশ দিনই চাষকৃত মাছ বিক্রি করতে হয়।
শনির হাওরের দক্ষিন পাড় রামজীবনপুর গ্রামের কামাল মিয়া তিনি জানান, বর্ষকালে কারেন্ট জাল, বেড় জাল, রিং চাই দিয়ে এবং হেমন্ত মৌসুমে বিল, জলাশয় সেচ দিয়ে মা মাছ সহ পোনা মাছ ধরার কারনেই দিনে দিনে মাছ কমে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, আমাদের গ্রামের চতুরপাশে দু উপজেলার তিন চারটি বড় বড় হাওর রয়েছে। আমরাই দেশি মাছ পাই না আপনারা পাবেন কোথা থেকে। আমাদের অঞ্চল থেকেই তো জেলা উপজেলা সদরে মাছ যায়।
শুধূ কামাল মিয়া নয় এ বক্তব্য হাওর পারের প্রতিটি গ্রামের লোকজনের। এখন আর তেমন মাছ পাওয়া যায় না। এক সময় প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া গেলেও এখন চাষকৃত মাছই ভরসা।
টাঙ্গুয়ার হাওর সহ তাহিরপুরের বিভিন্ন ট্যুরিজম স্পটকে কেন্দ্র করে তাহিরপুরে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘেেট। ঘুরতে আসা পর্যটকদের খাবরের চাহিদাও থাকে দেশি মাছ। কিন্তু দেশি মাছ সব সময় না পাওয়ার কারণে অনেকেই আশাহত হয়েও ফিরে যান। চট্রগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক, জহিরুল হক টুটুল ও হাসানুর রহমান হাসান জানান, শুনেছি টাঙ্গুয়া হাওর সহ তাহিরপুর হাওরে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যায় কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে দেশি মাছ মিলাতে প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। তাছাড়া দামও অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামছুল করিম বলেন, চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল, বেড় জালের ব্যাবহার রোধ করতে প্রায় সময় মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করা হয়। তাছাড়া জনবল সংকটওে কারণেও সব সময় সব এলাকা নজর দাড়িতে রাখা সম্ভব হয় না। তবে আমরা চেষ্টা করছি অবৈধ জাল ব্যবাহার বন্ধ করতে।