সচেতনতা বাড়ানো গেলে হেড-নেক ক্যান্সার ৫০ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব

1

সংবাদ সম্মেলনে ডা. নূরুল হুদা নাঈম

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা নাঈম বলেছেন, ‘বিশ্বে মহামারীর মত রূপ নিচ্ছে হেড-নেক ক্যান্সার। রোগটির লক্ষণ দেরিতে প্রকাশ হওয়ার কারণে এটি নিরব ঘাতক হিসেবে কাজ কাজ করে। তাই হেড-নেক ক্যান্সার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা উত্তম। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধযাগ্য। তিনি গত শনিবার সিলেট নগরেরর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে বিশ্ব হেড-নেক ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। ডা. নুরুল হুদা নাঈম বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মানব মৃত্যুর প্রথম কারণ হৃদরোগ। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ক্যান্সার। ক্যান্সারের মধ্যে ২০০ প্রকার রয়েছে। এরমধ্যে হেড-নেক ক্যান্সারের অবস্থান আগে ছিল সপ্তম। বর্তমানে এটি চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তাই এ বিষয়টি চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলেছে।’ ডা. নাঈম বলেন, ‘এ রোগের লক্ষণ দেরিতে ধরা পড়ে। যার কারণে মাসুষ বুঝতে পারে না ক্যান্সার আক্রান্ত কী না। যখন বুঝতে পারে তখন অনেকের পক্ষে আর কিছুই করার থাকে না।’ এ বিষয়ে করণীয় বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কোনো উপসর্গ যেমন মুখে বা জিহŸায় ক্ষত, গলার বাহিরে টিউমার বা গোটা, নাক-মুখ-কান দিয়ে রক্ত পড়া, স্বর ভঙ্গ হওয়া, খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এ রকম কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব বেশি।’
ডা. নূরুল হুদা আরও বলেন, ‘হেড নেক ক্যান্সার প্রতিরোধ করা প্রতিকারের চেয়ে ভালো। প্রতিরোধে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার জয় করা সম্ভব। কিছু দিন আগেও ক্যান্সার শব্দটি মানুষের কাছে ছিল আতঙ্কের। এখন আর তেমনটি নয়। সচেতনতার মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক রোগী ভালো হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে প্রায় দুইশ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, ফুসফুস, জরায়ু ও কলোরেক্টাল ক্যান্সার বেশি। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় ফুসফুসে ক্যান্সার আক্রান্তদের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কলোরেক্টাল ক্যান্সার। আর হেড-নেক ক্যান্সারের অবস্থান চতুর্থ।’ বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩-১৫ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন। আর ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় প্রায় ২ লাখ মানুষের। তবে আশার বিষয় হলো হেড-নেক ক্যান্সার হাইলি-কিউরেবল অর্থাৎ চিকিৎসায় ভালো হয়। গড়ে প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে একটি বড় অংশকে ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন এ চিকিৎসক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন, এনজেএল গর্বিত মা-বাবা সম্মাননা এর সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি, এনজেএল ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাডভোকেট রেজাউল করীম তারুকদার, অ্যানেশথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. এইচ আহমদ রুবেল, ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. জহিরুল ইসলাম, ইএনটি বিশেষজ্ঞ টি এইচ আহমেদ ইমরান, ডেন্টাল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে হেড-নেক ক্যান্সার আক্রান্ত কয়েকজন ব্যক্তি তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে হেড-নেক ক্যান্সারে লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ বিষয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ তথ্য তুলে ধরেন ডা. ন‚রুল হুদা নাঈম।