সুস্থ থাকতে সচেতন হই

11

 

বংশগত রক্তরোগ থ্যালাসেমিয়া একই সঙ্গে জিনবাহিত রোগ। মা ও বাবা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে শিশুর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে ২৫ শতাংশ। বাহক হওয়ার ঝুঁকি থাকে ৫০ শতাংশ। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগে থাকে। থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহিত রক্তকণা উৎপাদিত হয় না। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য থ্যালাসেমিয়া একটি গুরুতর সমস্যা। কারণ দেশে শতকরা ৮-১০ ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক; কিন্তু বেশির ভাগই এ বিষয়ে অজ্ঞ। প্রায় দেড় কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের জিন বহন করছে এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়ার জিন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। এমন অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ২০২৩।
থ্যালাসেমিয়া সাধারণত দুই ধরনেরÑআলফা থ্যালাসেমিয়া বা থ্যালাসেমিয়া মাইনর ও বেটা থ্যালাসেমিয়া বা থ্যালাসেমিয়া মেজর। থ্যালাসেমিয়া মাইনর রোগীর দেহে কম রক্তকণিকা উৎপন্ন হলেও তাদের কোনো লক্ষণ বা জটিলতা দেখা দেয় না, কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। বেশির ভাগ রোগী জানেও না তাদের দেহে এ রোগ বাহক হিসেবে আছে। বেটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে অল্প বয়সেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
যেহেতু স্বামী-স্ত্রী উভয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলেই শুধু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হতে পারে, কাজেই বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর থ্যালাসেমিয়া বাহক নির্ণয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। থ্যালাসেমিয়ার এক বাহকের সঙ্গে আরেক বাহকের বিয়েকে নিরুৎসাহ করাই থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের কার্যকর উপায়। যদি থ্যালাসেমিয়া রোগের কোনো বাহক অন্য বাহককে বিয়ে না করে, তাহলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকবে। এ জন্য বিয়ের আগে ছেলেমেয়ে উভয়েরই রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। যদি একজন বাহকের সঙ্গে একজন সুস্থ মানুষের বিয়ে হয়, তাহলে সন্তান বাহক হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। যাদের পরিবারে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু আছে, সেসব পরিবারের সদস্যদের বাহক নির্ণয় করা সবার আগে জরুরি। কারণ সবচেয়ে বেশি বাহকের বিস্তার এসব পরিবারে। যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা জিন বহন করছে তারা প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।
চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত সব জনবলকে থ্যালাসেমিয়ার বাহক নির্ণয়সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উপজেলা পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়ার বাহক নির্ণয় সহজলভ্য করতে হবে।