সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ : অব্যাহতি পাওয়ায় প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন দুই শিক্ষক

13

স্টাফ রিপোর্টার

কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খÐকালীন দুই শিক্ষককে অব্যাহতি প্রদান করায় বহিরাগতদের নিয়ে হামলা, শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করা এবং নানা অপপ্রচারের অভিযোগ করে এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়েছেন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল খালিক।
বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘গত ২২ মার্চ দুজন খন্ডকালীন শিক্ষক রুনা সুলতানা ও মাহমুদা আক্তার সুমীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওইদিন সম্মানজনকভাবে তাদেরকে বিদায় দেওয়া হয়। মূলত, তাদের বিরুদ্ধে পাঠদানে অবহেলা, শ্রেণি ও পরীক্ষাকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার, প্রায় প্রতিদিন ছুটির ঘণ্টার আগেই শ্রেণিকক্ষ এবং বিদ্যালয় ত্যাগ করা, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা-সহ বেশ কিছু অভিযোগ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আগের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আবুল ফতেহ তাঁর দায়িত্বকালে প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান উন্নীত করার জন্য এই দুই খÐকালীন শিক্ষকের দোষ পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে শিক্ষকতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। এর প্রেক্ষিতে সতর্ক করা হয় এবং সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়। শ্রেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহার না করতে নোটিশ দেওয়া হয়।’
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘সংশোধনের সুযোগ দেওয়া সত্তে¡ও তারা এসএসসি ২০২২ ব্যাচের নির্বাচনী পরীক্ষায় দায়িত্বপালনকালে তিন ঘণ্টার প্রায় পুরো সময় তারা মোবাইল ফোনে ভিডিওকলে মগ্ন থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশ মহিলা অধিদপ্তর-সহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে আর্থিক অনুদান গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। রুনা সুলতানা বিভিন্ন ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদ্যালয়ে এসে শ্রেণিকার্যক্রমের মধ্যে ইন্সুরেন্স কার্যক্রম করতেন। শিক্ষার্থীদের হুমকি প্রদান, অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়া-সহ এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক নতুন দুজন শিক্ষক প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই দুই খÐকালীন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।’
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে দুই শিক্ষক বহিরাগতদের নিয়ে হামলা করেন অভিযোগ করে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অব্যাহতি দেওয়ার পর গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে তারা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন এবং রুনা সুলতানা আমার (প্রধান শিক্ষকের) কক্ষে থাকা শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে যান। ছুটির দিন বলে স্বাক্ষর করতে নিষেধ করায় তিনি অন্য শিক্ষকদের সামনে আমার কলার চেপে ধরেন এবং অশালীন ভাষায় গালি দিতে থাকেন। অন্য শিক্ষকরা এসে তাকে সরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরেই তারা বহিরাগতদের নিয়ে আসেন এবং আমার উপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে আমাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে বের করে দেয় এবং শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে।’
দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সালমা বাসিত এ ঘটনার সাক্ষী বলে জানান তিনি। পরে, পুলিশের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে তাদের বাসায় ফেরার ব্যবস্থা করা হয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি তার। পরে, এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের এক মানববন্ধনেও হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।
দুই শিক্ষকের নিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালিক বলেন, ‘রুনা সুলতানাকে ১৪ মে ২০১৪ সালে সম্পূর্ণ অস্থায়ী (খÐকালীন) শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার নিয়োগপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় যে-কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া প্রতিষ্ঠান তাকে অব্যাহতি দিতে পারবে। অন্য শিক্ষকের নিয়োগপত্র নেই।’ তা সত্তে¡ও তাদেরকে সম্মানজনকভাবে বিদায় দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
গত ১১ এপ্রিল প্রেসক্লাবে খÐকালীন শিক্ষক মাহমুদা আক্তার সুমীর সংবাদ সম্মেলন ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাহমুদ আক্তার আমার এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিপক্ষে বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। তার এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহহীন। অব্যাহতি পাওয়ার আগে তিনি কখনও এ ধরনের অভিযোগ করেননি। অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এসব বানানো গল্প সাজাচ্ছেন। এতে আমার ও বিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।’
দুই শিক্ষককে অনৈতিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, সিলেট বা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদর্শন এবং অনতিবিলম্বে তার নিয়োগপত্র প্রদর্শন করার অনুরোধ জানান তিনি। অন্যথায়, এভাবে জনমানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির একজন সদস্যকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগও সত্য নয় বলে জানান আব্দুল খালিক। তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিটি একজনকে সাময়িকভাবে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিতে অনুরোধ করেছে। এভাবে চারজন অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের কাউকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। নতুন শিক্ষক এলে বা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিলে এরা শিক্ষক হিসেবে থাকবেন না।’
মূলত, বিদ্যালয়ের অগ্রগতি রুখতে একদল চক্রান্তকারীর সহযোগিতায় এই দুই শিক্ষক নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন বলে দাবি করেন তিনি। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মো. আব্দুল খালিক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কুমারপাড়ার বিশিষ্ট মুরব্বি ও অভিভাবক মতু মিয়া, রেজওয়ান আহমদ, জুয়েল আহমদ, অভিভাবক কামাল আহমদ, ইরশাদ মিয়া, মামুনুর রহমান, ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন, প্রভাষক সাজিদুর রহমান মুরাদ, শিক্ষক প্রতিনিধি রওশন জাহান, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল কাইয়ুম শেখ, সদস্য আব্দুল আহাদ, সদস্য রুনা বেগম, সৈয়দা তামান্না রহমান, আব্দুল বাছিত, আব্দুল মুমিন প্রমুখ।