অসহনীয় তাপমাত্রা : উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

9

মার্কিন আবহাওয়া চ্যানেল এসিসিইউ ওয়েদার জানিয়েছে, ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল রাজধানীর তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রিতে। সেই হিসাবে ৯ বছরের মধ্যে গত শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উদ্বেগজনক হলো, গত কয়েকদিনের রেকর্ড অনুযায়ী, রাজধানীর তাপমাত্রা কেবলই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃষ্টিশূন্যতার পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে ধেয়ে আসা ‘লু হাওয়া’য় এমন দাবদাহ পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এ অবস্থায় মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাÐ দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে, বিশেষ করে খেটে খাওয়া নিম্ন-আয়ের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে, তা বলাই বাহুল্য।
বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ুর প্রভাব সম্পর্কে বহুদিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেও স্বল্পোন্নত এবং ধনী দেশগুলো তাতে কর্ণপাত করেনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। গত দুই দশকে জলবায়ুর প্রভাবে দেশে দুর্যোগের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে অন্তত চারগুণ। এটি আমাদের মতো কৃষিপ্রধান ও অধিক জনসংখ্যার দেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। এ অবস্থায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত দেশগুলোর তাৎক্ষণিক ও উচ্চাভিলাষী অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোরও প্রশমনব্যবস্থার দিকে অধিকতর মনোযোগী হওয়া উচিত।
বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর কোটি কোটি গাছের চারা রোপণ করার পরও জাতিসংঘ বলছে, গত ১০ বছরে বিশ্বে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ হেক্টর বনভ‚মি। এ হিসাবে প্রতি মিনিটে ধ্বংস হচ্ছে প্রায় আট হেক্টর বনভ‚মি। যে হারে পৃথিবীতে বন উজাড় হচ্ছে, সে হারে বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে না। বাংলাদেশে গড়ে ২৪ ঘণ্টায় এক লাখ ৩০ হাজার বৃক্ষ নিধন হলেও রোপণ হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে কী নিষ্ঠুর আচরণ করছি আমরা! এতে স্বাভাবিকভাবেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের জলবায়ু, পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর। উন্নয়নের চাকা গতিশীল রাখতে হলে সর্বাগ্রে মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণগুলো শক্ত হাতে দূর করা উচিত। এজন্য দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি অবৈধ ইটভাটা বন্ধসহ সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।