ইফতারসামগ্রী কেমিক্যালমুক্ত হোক

4

নিরাপদ খাদ্যের দাবি আজ বিশ্বজুড়ে। অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য-পানীয় ভাবনায় আজ বিশ্ব সোচ্চার। এর মধ্যেও অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। পর্যাপ্ত খাদ্য ও পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন না হলে মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নেবে। এ কারণে কেমিক্যালমুক্ত খাবারের দাবিতে যখন সোচ্চার বিশ্ব, তখন আমরা দেখছি মুসলিম উম্মার নেক আমলের রমজান মাসে কেমিক্যালযুক্ত খাবারে সয়লাব বাজার। রমজান মাসে বাহারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ইফতারির জন্য তরমুজ, বেগুনি, আলুর চপ, খেজুর, আম, কলা, কোর্মা-কালিয়া, পোলাও, বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার যার সাধ্যমতো চেষ্টা করেন রমজান মাসে ভালো কিছু খাওয়ার। কিন্তু রাস্তার পাশে অধিকাংশ খাবার নিরাপদ নয়, এ কথা বারবার প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। এর পরও পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ফুটপাতে মুখরোচক বাহারি ইফতারি বিক্রি করা হচ্ছে।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে অপ্রচলিত খাবারের আয়োজনও আছে ইফতারির তালিকায়। বছরের অন্য সময় যেসব খাবার খুব কম খাওয়া হয়, সেসব খাবারের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা বিবেচনায় রমজান মাসজুড়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে ইফতারির অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন বিক্রেতারা। এসব দোকানে ইফতারি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। রমজান মাসে এ চিত্র যেন সারাদেশের। মৌসুমি ইফতারি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জেলা শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোর বাইরে ফুটপাতে ইফতারির পসরা সাজানো হয়েছে। রাস্তার ধুলাবালি উপেক্ষা করেই বিক্রি করা হচ্ছে তেলে ভাজা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। তবে এসব খাবার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ক্রেতাদের। স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উপেক্ষা করেই ক্রেতারা এসব কিনছেন। ফুটপাতে ইফতারি বিক্রি করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, ফুটপাতের খাবারে অনেক সময় ক্ষতিকর মসলা ও রঙ ব্যবহার করা হয়। ফলে এসব খাবার দেখতে আকর্ষণীয় ও মুখরোচক হয়। দিনভর রোজা পালন শেষে কোনো অবস্থাতেই তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অন্যদিকে খোলা জায়গায় প্রদর্শন করা এসব খাবারে ধুলা থেকে জীবাণু ছড়াতে পারে। তা থেকে পেটের পীড়া ও বদহজম হতে পারে; এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি, লিভারের ক্ষতিসহ বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থাকে।
খোলা পরিবেশে রাস্তায় খাদ্যসামগ্রী বিক্রি কোনো অবস্থাতেই স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে না। অন্যদিকে অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোর ফুটপাতে ইফতারি বিক্রির বিষয়টিও ঠিক মনে হচ্ছে না। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানটি যদি রাস্তায় নেমে আসে, তা হলে তো ভরসার কোনো জায়গা থাকে না। রাস্তার খাবার পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলেও ঢাকার বাতাসে যে পরিমাণ ধুলা ও বিষাক্ত সব স্বাস্থ্যবিরোধী জিনিসপত্র থাকে, তাতে এসব খাবার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। তার পরও অবলীলায় কিনছেন সবাই এসব ইফতারি। এর খাদ্যমান বিচারেও কারও যেন কোনো দায় নেই। এই দায়মুক্ত করা একান্ত জরুরি। বিশ্বের অনেক দেশই বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্যের নিশ্চয়তা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে- যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী খাবারের সঙ্গে কেমিক্যালজাতীয় কোনো পদার্থ ব্যবহার করতে না পারেন। অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা অকল্পনীয় হারে বেড়েছে। রমজান মাসে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিষ ও ভেজালমুক্ত ইফতারির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, নিরাপদ খাদ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংগঠনের সহযোগিতা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি। রমজান মাসে যেখানে সারাবিশ্বের মুসলমানরা ত্যাগ-কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেন, সেখানে আমাদের দেশে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। এটি রমজানের শিক্ষা নয়। সরকার এ সময় কমমূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য টিসিবিকে দায়িত্ব দিয়েছে, কয়েকটি পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়েছে। সরকারের এত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্তে¡ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অপ্রতিরোধ্য। তাদের কোনোমতেই থামানো যাচ্ছে না। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে। জনগণকেও রমজানের শিক্ষায় শিক্ষিত ও সচেতন না করলে রমজানের মহিমা কোনোমতেই সম্ভব নয়।