মশা নিধনে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

6

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ সিলেট নগরবাসী। মশা নির্মূলের মূল দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। মশা নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনের তৎপরতা তেমন দেখা যাচ্ছে না। ওয়ার্ডভিত্তিক মশক নিধনেও তেমন কোনো তৎপরতা নেই। কীটতত্ত¡বিদরা বলছেন, শীত-পরবর্তী সময়ে সারাদেশে মশার উপদ্রব বাড়ে। এই সময়ে দেশের যে কোনো জায়গায় বছরের অন্য সময়ের তুলনায় মশা অনেক বেশি হয়। এবারো তাই হয়েছে। যদিও এডিসবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। তবে কিউলেক্স মশা বেড়েছে। এই মশাও কম বিপজ্জনক নয়। মশার মাধ্যমে ফাইলেরিয়া ছড়ায়। এ রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে।
অন্য সময়ের তুলনায় মশার ঘনত্ব বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। মশা বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহর আর গ্রামের অবস্থা ভিন্নতর। প্রধানত আলোচনায় শহরের কথাই উঠে আসে, তাই শহরকেন্দ্রিক ভাবনাই প্রাধান্য পায়। আবদ্ধ পানি, উন্মুক্ত ড্রেন ও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা মশার বংশবিস্তারের প্রধান কারণ।
সিলেট নগরীর সর্বত্রই এখন মশার মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। প্রকৃত অর্থে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার লার্ভার বিস্তার রোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এ কার্যক্রম কম দেখা যায়। মশার উৎপাতে সারা বছরই অতিষ্ঠ থাকেন নগরবাসী। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ভ‚মিকা নিয়েও নানা অভিযোগ নগরবাসীর। মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা থাকলে আবারো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়বে। বছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। কীটতত্ত¡বিদরা বলছেন, কিউলেক্স মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের, এটা নগরবাসীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কেননা মশার প্রজনন স্থান ডোবা-নালায় জমে থাকা পানিতে। আর শহরে এটা পরিষ্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এসব কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হলে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মশা নিধনের মতো জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এখন এডিস মশার প্রাদুর্ভাব কম। সামনে বর্ষাকাল। বৃষ্টি হলেই এডিস মশা বাড়বে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে এখন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। কেবল এডিস নয়, সব ধরনের মশা নিধনেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশা নিধনেও পড়বে। মশা নিধনে শুধু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়, স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি। নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মশা নিধনে শুধু বরাদ্দ বৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন সব পক্ষের সচেতনতা। সরকারি-বেসরকারি সব মহলের আন্তরিক ও সমন্বিত উদ্যোগে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে- এটাই প্রত্যাশা।