বান্দরবানে সিলেটের দুই জঙ্গিসহ নয় জন গ্রেফতার

9

কাজিরবাজার ডেস্ক

বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ছত্রছায়ায় নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইসহ ৯ জনকে বান্দরবানের টংকাবতী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সিলেটের বিয়ানীবাজারের কামাল আহম্মেদ চৌধুরীর পুত্র তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ ওরফে রিতেং (১৯) ও সিলেট নগরীন শাহপরান থানার আব্দুল কাদিরের পুত্র মো. লোকমান মিয়া (২৩) রয়েছেন। গতকাল সোমবার র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত রবিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-১, ১১ ও ১৫ বান্দরবানে যৌথ অভিযান শুরু করে। অভিযানে বান্দরবানের টংকাবতী এলাকা থেকে পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার সদর কুমিল্লা সদরের আব্দুর রহিমের পুত্র মো. দিদার হোসেন ওরফে মাসুম ওরফে চাম্পাই (২৫), নারায়ণগঞ্জ সদরের মো. ইউনুস সর্দারের পুত্র আল আমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে বাহাই (২৯), ঢাকার কামরাঙ্গীরের মো. আবুল কালামের পুত্র সাইনুন ওরফে রায়হান ওরফে হুজাইফা (২১), বিয়ানীবাজারের তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ ওরফে রিতেং, সিলেটের মো. লোকমান মিয়া, কুমিল্লার লাকসামের মৃত আব্দুল আজিজের পুত্র মো. ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল ওরফে শান্ত (৩৫), ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের আনোয়ার হোসেনের পুত্র মো. আমির হোসেন (২১), বরিশাল সদরের ফারুক হাওলাদারের পুত্র মো. আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮) এবং ময়মনসিংহের ফুলপুরের গেয়াস উদ্দিনের পুত্র শামিম মিয়া ওরফে রমজান ওরফে বাকলাইকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়। এসময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণ নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব ফোর্সেস নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‌্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় এবং জানতে পারে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। পরে গত ৩ অক্টোবর থেকে পার্বত্য এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব। এর প্রেক্ষিতে ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালায়। গত ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫ সদস্যকে, গত ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় এ সংগঠনের শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে, গত ৭ ফেব্রæয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লক্ষাধিক টাকাসহ জঙ্গি সংগঠনের ১৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ২০ জন এবং ১ মার্চ চট্টগ্রামের গহীনে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া ৪ জঙ্গিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের পরিচালিত অভিযানে ইতোমধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ মোট ৫৯ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’ এর ১৭ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়াও উদ্ধার করা হয় সংগঠন সস্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট।
বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পেরেছে, এই সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান মাইমুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব এবং ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার। সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সঙ্গে কেএনএফ এর প্রধান নাথামবমের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে নাথাম বমের সঙ্গে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হয়, এরপর তারা পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন।