রপ্তানি বহুমুখীকরণ

8

অনেক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এগিয়ে চলেছে। কখনো সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কখনো কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে। কখনো বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের কিছু ক্রেতার আচরণ বাংলাদেশের এই শিল্পের জন্য বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায়ও উঠে এসেছে তেমন কিছু তথ্য, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।
তৈরি পোশাকের বড় কিছু বৈশ্বিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মূলত তারাই সারা পৃথিবীর তৈরি পোশাকের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কর্মকা-, পোশাকের দর, বিদ্যমান লেনদেন ব্যবস্থা, শ্রমিকের ওপর তার প্রভাবসহ এ খাতের নানা বিষয় নিয়ে একটি গবেষণা জরিপ পরিচালনা করে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব আবেরডিন এবং বাণিজ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সফর্ম ট্রেড। ‘ইমপ্যাক্ট অব গ্লোবাল ক্লদিং রিটেইলার্স আনফেয়ার প্র্যাকটিসেস অব বাংলাদেশি সাপ্লাইয়ার্স ডিউরিং কভিড-১৯’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বেশির ভাগ পোশাক কারখানাই তাদের পণ্য বিশ্বের ২৪টি বড় খুচরা প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ড শপের কাছে বিক্রি করে। এরা করোনা মহামারির শুরুতে যে দাম ছিল, সেই দামই পরিশোধ করছে। অথচ এত দিনে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে, বেড়েছে কাঁচামালের দাম। জরিপে বাংলাদেশের এক হাজার তৈরি পোশাক উদ্যোক্তার মতামত নেওয়া হয়। উদ্যোক্তারা জানান, বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড অনেক ক্ষেত্রেই এমন দাম পরিশোধ করে, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হয়ে যায়। অনেক ক্রেতার বিরুদ্ধে অন্যায্য মূল্যে কেনাকাটাসহ লেনদেনে যথাযথ আচরণ না করারও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আরো রয়েছে অর্ডার বাতিল করা, মূল্য পরিশোধে ব্যর্থতা, মূল্য পরিশোধে বিলম্ব এবং অতিরিক্ত ছাড় দাবি করা।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই শিল্প খাতটির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের অনেকের অন্যায্য আচরণ এই খাতটিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আর চূড়ান্ত বিচারে তার শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। অনেক প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম মজুরি ২.৩০ পাউন্ড পরিশোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছে। জরিপে উঠে এসেছে, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে এখনো এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। করোনা মহামারি শুরুর আগে এ খাতে যত শ্রমিক নিয়োজিত ছিলেন, লকডাউন-পরবর্তী সময়ে সেখানে নিয়োজিত আছেন তার মাত্র ৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৯ লাখের মতো শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। জরিপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাজ্যের তৈরি পোশাকের খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফ্যাশন ওয়াচডগ গড়ে তোলা প্রয়োজন, যারা এই ক্ষেত্রের বাণিজ্যের ওপর নজরদারি করবে।
বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই পোশাকশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে। কোথাও কোথাও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে ধরনের অসংগতি দেখা যায়, তা দূর করতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বিশ্ববাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানির নতুন নতুন গন্তব্য খুঁজে বের করতে হবে এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে।