সেঞ্চুরিতে চিনি, পেঁয়াজের বাজারেও আতঙ্ক

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
হঠাৎ করে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা দাম বাড়ায় পেঁয়াজের বাজারে গত বছরের মতো ফের ‘অক্টোবর আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। নির্ধারিত দামের সীমা অতিক্রম করে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে খ্যাত চিনির মূল্য এখন সেঞ্চুরিতে। ১০০ টাকার নিচে চিনি কিনতে পারছেন না ভোক্তারা। সয়াবিন তেলের দাম কমানো হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সাধারণ ক্রেতাদের ভয় বাড়ছে পেঁয়াজ নিয়ে। এ অবস্থায় অস্বস্তি বিরাজ করছে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। আমদানিকারক, পাইকার, আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আর এ কারণে বাড়ছে দাম। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর অক্টোবর মাস আসলেই পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করে থাকে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এই সময়ে বাড়তে বাড়তে নাগালের বাইরে চলে যায় এই পণ্যটির দাম। গত কয়েক বছরের এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পীড়া দেয় ভোক্তাদের।
ইতোমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে। এই সুযোগ নিয়ে সব ধরনের দেশী ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে মানভেদে কেজিপ্রতি পাঁচ-আট টাকা পর্যন্ত। শ্যামাপূজা (কালী) সামনে রেখে অতিরিক্ত চাহিদার প্রয়োজনে ভারত রপ্তানি সীমিতকরণ বা বন্ধ করলে দেশে এই পণ্যটির দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে তা নিয়ে চিন্তিত ক্রেতারা। এ কারণে এখন থেকেই পেঁয়াজের সরবরাহ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং চাহিদামতো সন্তোষজনক মজুদের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ- অতীতের মতো দেশে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। আমদানির পাশাপাশি এ বছর দেশীয় উৎপাদন ও সরবরাহ ভালো। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়লেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। এ নিয়ে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পেঁয়াজের বাজারের দিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
তবে এ নিয়ে এখনই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমদানি অব্যাহত রয়েছে, তবে নানা ধরনের বৈশ্বিক সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য দাম কিছুটা বাড়তে পারে। পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে।
তিনি বলেন, সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে পেঁয়াজ দিচ্ছে। এ ছাড়া ভারত হুট করে রপ্তানি সীমিতকরণ বা বন্ধ করবে না। একটি নির্দিষ্ট সময় দিয়ে তারা রপ্তানি বন্ধ করতে পারবে- এ ধরনের একটি সমঝোতা চুক্তি রয়েছে দেশটির সঙ্গে। এ কারণে পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এদিকে, ঢাকার কৃষিপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে খ্যাত শ্যামপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে পেঁয়াজের আমদানি কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে সেখানে দাম কিছুটা বাড়তি এবং অপেক্ষাকৃত ভালো মানের পেঁয়াজের কিছুটা সংকট রয়েছে। শ্যামাপূজা সামনে রেখে সেখানে পেঁয়াজের চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে।
এ ছাড়া ভারতের মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও নাসিকের নতুন পেঁয়াজ এখনো মাঠে রয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেই পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমদানি মূল্য বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশীয় মজুদের প্রায় ১২ আনি পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বিক্রি ও খাওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পেঁয়াজের আড়তদার ও আমদানিকারক মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শুভাস বসাক পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি এবং দেশীয় মজুদও শেষ হয়ে আসছে। এ কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমদানি অব্যাহত থাকা।
কোন কারণে ভারত রপ্তানি সীমিতকরণ বা বন্ধ করলে দেশে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ঢাকার খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ মানভেদে ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া, মহল্লা বা দোকান ও মার্কেট বিশেষে ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। দাম কমানোর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে দ্রুত বাড়তে পারে এই পণ্যটির দাম।
খুচরা ব্যবসায়ী হাজি মহসিন হোসেন টিটু বলেন, কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ-আট টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ায় খুচরায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ৫০ টাকার নিচে কোন পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে অক্টোবর মাসে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি হয়ে থাকে। এতে করে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৩০০ টাকায় কেনার বাজে ও তিক্ত অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে ভোক্তাদের।
এবারও যাতে সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে আগেভাগে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাব। সংগঠনটির একজন কর্মকর্তা জানান, পেঁয়াজের ব্যাপারে আগাম সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে চিনি ও ভোজ্যতেলের সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হওয়া প্রয়োজন।
এদিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য চিনি এখন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি চিনিতে দাম বেড়েছে পাঁচ-দশ টাকা পর্যন্ত। ১০০ টাকার নিচে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বাজারে। অথচ সরকার ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ৬ অক্টোবর চিনির দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়ে দেয়।
নতুন দামে খোলা চিনি প্রতিকেজি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকায় বিক্রি হবে খুচরা পর্যায়ে। কিন্তু এই দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না চিনি। ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ক্রুড সুগার আমদানি কম হওয়ার কারণে চিনির উৎপাদন কমে গেছে বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অবশেষে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে করে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকারেরর বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মুখে চিনির দাম বাড়ানো সঠিক হয়নি।