সিলেট-তামাবিল চার লেন মহাসড়ক ॥ কেবল উত্তর পাশে জমি অধিগ্রহণ হলে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে

13

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট-তামাবিল চার লেন মহাসড়কের সুরমা গেইট বাইপাস পয়েন্ট থেকে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত কেবল উত্তরপাশে জমি অধিগ্রহণের জন্য একটি চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এমনটা হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অসংখ্য ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় নাগরিকরা।
তাই, ডিজিটাল নকশা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়ন, খিদিরপুর, আটগাঁও ও চুয়াবহর বটেশ্বর মৌজার নাগরিকরা। গতকাল বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান স্থানীয়রা।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি, তামাবিল সড়কের দক্ষিণ সীমানায় কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি সরকারের এ উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত করতে সরজমিন কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে এবং সড়কের উত্তর পাশের জনসাধারণের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্তের জন্য প্ররোচণায় লিপ্ত হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিসিডিবি’র লাল ফিতা চিহ্নিতকরণের কাজে আপত্তি ও বেনামি কিছু প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে দরখাস্ত দাখিল করেছে। একইসঙ্গে তারা অনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত।’
এলাকাবাসী বলেন, ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক নির্মাণ শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা আন্তঃদেশীয় কানেকটিভিটি প্রকল্প। চার লেনে এ সড়ক উন্নীত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি ও যোগাযোগ স্থাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠবে। সরকারের এই প্রকল্প আমরা সর্বাত্মক সমর্থন করি। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিপ্রায় আমাদের নেই।’
খাদিমপাড়াবাসী আরও বলেন, ‘বিগত সেটেলমেন্ট জরিপে সিলেট-তামাবিল-শিলং সড়ক সম্প্রসারণের জন্য খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সুরমা গেট থেকে বটেশ^র ক্যান্টনমেন্টের পূর্ব পর্যন্ত কেবলউত্তরপাশে (তামাবিলমুখী বাম পাশে) জমি অধিগ্রহণের নকশা প্রণয়ন হয়।’
স্থানীয়রা জানান, দুই বছর আগে চার লেন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অধিগ্রহণ ও প্রকল্পের ডিজিটাল নকশা প্রস্তুতের সহযোগিতায় নিয়োজিত সিসিডিবি কর্মকর্তারা প্রথম যখন সুরমা গেইট বাইপাস পয়েন্ট থেকে জালালাবাদ ক্যান্টমেন্টের পূর্ব সীমানা পর্যন্ত শুধু উত্তর পার্শ্বে অধিগ্রহণের খসড়া নকশা প্রস্তুত ও সরজমিনে সবুজ চিহ্ন দিয়েছিলেন। তখন আমরা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করি এবং সরকারের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়ে আপত্তি জানাই।’
তারা আরও বলেন, ‘বিষয়টি আমলে নিয়ে কর্মকর্তারা পুনরায় চার লেন প্রকল্পের নকশা সংশোধন করে রাস্তার উভয় পাশেজমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেন। স্যাটেলাইট যুক্ত করে তামাবিল সড়কের উভয় পাশের জমি অধিগ্রহণের জন্য ডিজিটাল নকশা প্রস্তুত ও অধিগ্রহণের খসড়া তৈরি করে সিসিডিবি। সবুজ চিহ্নে চিহ্নিত করে এবং পরবর্তীতে চুড়ান্তভাবে লাল চিহ্নে চিহ্নিত করেন তারা।’
কেবল উত্তর সীমানায় জমি অধিগ্রহণ হলে স্থানীয় নাগরিক ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কী ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হবে সে বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনাকারী ব্যক্তিরা বলেন, ‘এতে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এককভাবে অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
এতে তিন মৌজায় অবস্থিত যে সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখোমুখি হবে তার কয়েকটির তালিকাও দিয়েছেন তারা। সেগুলো হচ্ছেÑ সিএনজি ও এলপিজি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর রহমান এন্ড সন্স পেট্রোলপাম্প, দাসপাড়ার শাহজালাল বাজারে অবস্থিত মেসার্স এ.ই এন্টারপ্রাইজ পেট্রোলপাম্প, তাড়পাড়ায় প্রাণ আরএফএল কোম্পানি লিমিটেডের টেষ্টি ট্রিট ফুড ফেক্টরি, কাজী পোল্টি ফিড ফেক্টরি, পীরের বাজারে অবস্থিত ব্র্যাক রিজিওনাল অফিস ও ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারের বহুতল ভবন, পরগনা বাজারের জালাল সো-মিল, হাজী ভিলা সংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স,জালালাবাদ সেনানিবাসের পাওয়ার স্টেশন, দুইটি বিখ্যাত জামে মসজিদসহ অসংখ্য পাঁচ তলা বিল্ডিং অবস্থিত। এ অবস্থায় অসাধু ব্যক্তির ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে সড়কের উভয় পাশে জমি অধিগ্রহণের জোর দাবি জানান স্থানীয়রা। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মো. মখলিছ উর রহমান, ওজায়ের রহমান, রাহীক আহমদ মজুমদার, ফখরুল ইসলাম, শাহজাহান আহমদ, মুহাইমিনুল হক তপু, সেবুল আহমদ, আব্দুল খালিক, হাসান আহমদ, আহমদ আলী, মটন মিয়া, নিসার আলী, নাসির উদ্দিন, সেলিম আহমদ, মঞ্জুর আলম, সেনাজ উদ্দিন, রাজু ইঞ্জিনিয়ার, ফারুক আহমদ প্রমুখ।