প্রশ্নপত্র ফাঁস

4

কয়েক বছর ধরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর আসছে সংবাদমাধ্যমে। প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, এমনকি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগও আছে। এ থেকে রেহাই মিলছেই না।
এবারের এসএসসি পরীক্ষাও এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারল না।
কুড়িগ্রামের ভূরঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, রসায়ন এই চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করে পরীক্ষার নতুন তারিখও ঘোষণা করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গত মঙ্গলবার কেন্দ্রসচিবসহ তিন শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বুধবার আরো দুই শিক্ষক এবং একজন অফিস সহায়ককে আটক করেছে পুলিশ।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভূরুঙ্গামারীতে লকার থেকে প্রশ্ন আনার সময় এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। সেখানকার কেন্দ্রসচিব এক দিনের প্রশ্ন আনতে গিয়ে সঙ্গে পরবর্তী বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নও নিয়ে আসেন। ইংরেজি প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার পর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা হয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ এলে উপজেলা প্রশাসন এ নিয়ে নজরদারি শুরু করে। পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন এক পর্যায়ে নিশ্চিত হয় যে অনুষ্ঠিত কোনো বিষয়ের প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের মধ্যে করেই সামনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরানো হয়েছে। তার পরই ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী পুলিশ সুপার ও ভূরুঙ্গামারী থানার ওসির নেতৃত্বে একটি দল নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে তখন চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার গণিত, কৃষিবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বোর্ডের কলেজ পরিদর্শককে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।
আগে সরকারি প্রেসের কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা অনেকেই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ শোনা যেত। একটা সময় ছিল, যখন নৈতিকতাবর্জিত কিছু অভিভাবককে সঙ্গে নিয়ে এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত প্রশ্ন ফাঁসের ব্যবসা শুরু করেছিল। একটি চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁস করে একসময় প্রচুর টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে। এটা কিছু মানুষের স্থায়ী ব্যবসায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু এবার অভিযোগ কেন্দ্রসচিবের বিরুদ্ধে, যিনি প্রধান শিক্ষকও। একজন শিক্ষক এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন কী করে?
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার ঘটনা পরীক্ষার্থীদের মনের ওপর যে বড় ধরনের চাপ ফেলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা দরকার। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।