চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। একই সময়ে মূল্যস্ফীতি ৬.৭ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। তবে বাংলাদেশ বৈদেশিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও মনে করছে সংস্থাটি। এর আগে গত এপ্রিলে ৭.১% প্রবৃদ্ধি কথা বলেছিল সংস্থাটি।
এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এডিবির তৈরি করা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২২ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার এডিবির সদর দফতর থেকে নতুন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আর ঢাকা অফিসে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অংশ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।
এডিবি বলছে, অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় কমে যাওয়া, রফতানি ও রেমিটেন্স আয়ের দুর্বলতায় প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। তবে এ সময় চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে আসবে। গত বছর জিডিপির তুলনায় ঘাটতি যেখানে ৪.১ শতাংশ ছিল তা এবার কমে ৩.৬ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে রফতানি কমলে এ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুর্যোগকে একটি ঝুঁকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
এডিমন গিন্টিং বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এই সময়ে অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনের মাধ্যমে মধ্য মেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। এখন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ বলেও উল্লেখ করেন এডমিন।
প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া কারণ হিসেবে এডিবি বলছে, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জ্বালানি সঙ্কট ও জ্বালানির উচ্চ মূল্যের কারণে এ বছর কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ হবে না। কৃচ্ছ্রতার পদক্ষেপ নেয়ায় সরকারী বিনিয়োগেও ধীরগতি আসতে পারে। তাছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে বলছে সংস্থাটি।
অন্যদিকে ভর্তুকি ব্যয় বৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তায় বেশি বরাদ্দ থাকায় এবং রাজস্ব আয় না বাড়ায় রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে। গত অর্থবছরের যেটা জিডিপির ৪.১ শতাংশ ছিল তা বেড়ে ৫.১ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
বর্ষার সময়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার আমনের ফসলও উৎপাদন কমবে বলেও আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। তাছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার ফলে অবকাঠামো, অর্থনীতির ক্ষতির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। বিদ্যুত সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়ায় শিল্প উৎপাদন কমে যাবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। রফতানি বাজারেও চাহিদা কমে আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি আরও বেশি কঠিন করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি ও টাকার মান রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারে ধারণা করা হয়।
সরকার চলমান অর্থবছরে ৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। তাবে যদি এ বছর তা ৬.৬ শতাংশ হয় তবে তা এ অঞ্চলের অন্য দেশের তুলনায় ভাল অর্জন হবে বলে মনে করছে এডিবি। এক প্রশ্নে বাংলাদেশের জন্য ৮০ শতাংশ আমদানি বৃদ্ধিও প্রবণতাকে সুখবর উল্লেখ করে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিকে দুঃসংবাদ বলে মন্তব্য করেন এডমিন। রিজার্ভ নিয়ে সামনে কোন সঙ্কট আছে কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে কোন সঙ্কট নেই বলে জানান তিনি। রিজার্ভ যা আছে তা পর্যাপ্ত বলে উল্লেখ করলেও চলতি হিসাবেব ঘাটতির বিষয়টিকে একটি সমস্যা বলে অভিহিত করেন। রফতানি ও রেমিটেন্স বাড়লেও ব্যক্তি খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ দরকার বলেও মন্তব্য করেন।
সংস্কার পদক্ষেপ : এডিবি অর্থনৈতিক সংস্কারের কথা বলছে, কী ধরনের সংস্কার দরকার এমন প্রশ্ন ছিল। জবাবে এডিমন গিন্টিং বলেন, অবকাঠামোর পাশাপাশি মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ দরকার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে কর হ্রাস করা যেতে পারে। ভাল মানের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন। রফতানিতে এগিয়ে যেতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি নজর দিতে বলেন। লজিস্টিক সুবিধা বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি। সর্বোপরি রেগুলারিটি ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তুলার কথা বলেন। বাজেট সহায়তা প্রদানের এক প্রশ্নের জবাবে এডিমন বলেন, তিন বছরে এডিবি বাংলাদেশকে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদান করবে। যার মধ্যে ২০ শতাংশ বা ৭.২৩ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা রয়েছে।
এশিয়ার পরিস্থিতি : এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির গড় ৪.৯ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৪ শতাংশ। এ সময় ভারত, চীন, কোরিয়াসহ বেশ কিছু দেশের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একই সময়ে আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানের মতো দেশগুলোতেও চাহিদা কমে আসতে পারে। যার প্রভাব পড়বে এসব দেশে রফতানিতে।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে আরও সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করছে সংস্থাটি। গত ৪৯ বছরে এডিবি বাংলাদেশে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে বলে জানানো হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির ৪৯টি প্রকল্পে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলারের কাজ চলমান রয়েছে।