শাদমান শাবাব শাবি থেকে :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির আন্দোলন। ওই আন্দোলনে গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর ১৬ জানুয়ারি রাত থেকে সংঘবদ্ধভাবে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, উপাচার্যের প্রত্যক্ষ মদদেই পুলিশের বর্বরোচিত হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। বর্তমানে উপচার্যের পদত্যাগ দাবির ওই আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সম্পৃক্তদের নানাভাবে হয়রানির ও ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এই কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মোহাইমিনুল বাশার রাজ, একই বিভাগের শাহরিয়ার আবেদিন ও সাবরিনা শাহরিন রশিদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সজল কুন্ডু, পরিসংখ্যান বিভাগের নওরিন জামান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান (বিএমবি) বিভাগের হালিমা খানম এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের রাক্তিম সাদমান।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্লাসরুমের ভেতরে এবং বাহিরে যারা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট, তাদের প্রত্যেককে ধরে ধরে নিষ্পেষণ চালানো হচ্ছে, তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে। এই হয়রানিগুলোর পিছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য আছে। তারা শিক্ষার্থীদের এই বার্তা দিতে চায় যে তোমরা এতো আন্দোলন, এতো কিছু করার পরেও কিছু করতে পারো নি, তোমাদের একটি দাবিও আমরা মানি নি। এখন উল্টো তোমাদের উপর নিষ্পেষণ চালাচ্ছি, তোমাদের হয়রানি করছি। তোমরা কিছু করতেও পারো নি, তোমরা কিছু করতেও পারবে না।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন ও আমরণ অনশনের এক পর্যায়ে ঢাকা থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এবং ইয়াসমিন হক ম্যাম আমাদের মাঝে আসেন। তাঁরা বলেছিলেন সরকারের উপরমহলের অনুরোধে তারা আন্দোলনস্থলে এসেছেন এবং আমাদের সমস্ত দাবি মেনে নেয়া হবে এমন নিশ্চয়তা তাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে দীর্ঘ ১৬৩ ঘন্টা যাবত অনশনরত ২৭ জন শিক্ষার্থী অনশন থেকে সরে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আমাদের সাথে আলোচনার জন্য সিলেটে আসেন।
এসময় তাদের সঙ্গে আমাদের ৫টি দাবি এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে ৮ দফা প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর এখতিয়ারভুক্ত দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তাঁর এখতিয়ারভুক্ত নয় এমন দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলকে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিন্তু বর্তমানে আটমাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমাদের দাবিগুলোর অধিকাংশই এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের প্রথম এবং প্রধান দাবি ছিল, দ্রুততম সময়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করে একজন গবেষণা মনা, শিক্ষাবিদ ও অবিতর্কিত ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। মন্ত্রী এই বিষয়ে বলেছিলেন, ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এতদিন পরেও আমরা দেখছি শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলার মূল হোতা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শাবিপ্রবির উপাচার্য পদে বহাল আছেন। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার কথা ছিল, কিন্তু এতসময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও মামলাগুলো তোলা হয়নি।
সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ১৬ জানুয়ারির হামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী সজল কুন্ডুকে অন্তত ৯ম গ্রেডের একটি চাকরি এবং নগদ ক্ষতিপূরণ দেয়ার স্পষ্ট আশ্বাস দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সজল এখনো শিক্ষামন্ত্রী কর্তৃক প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ বা চাকরি কোনোটাই পাননি। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তিনি যে ক্যাফেটেরিয়াটি চালাতেন সেটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সজল একাই উদ্যোগী হয়ে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের নামে করা হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সজলের দাবিগুলোর সাথে সংহতি প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার কর্মসংস্থান ফিরিয়ে দিয়ে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তার চাকরি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।