যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে মানুষের জন্য কাজ করে যাবো – প্রধানমন্ত্রী

9
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা দিবসে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে নির্মিত বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেজন্য দিনরাত কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।’
রবিবার (২১ আগষ্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সারাবিশ্বে জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুতের অভাব, মুদ্রাস্ফীতি। আমরা তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। বিদ্যুতের ব্যবহার আমাদের সীমিত করতে হয়েছে। সার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছি। গ্যাস উৎপাদন এবং সার্ভে অব্যাহত রেখেছি। আমরা সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। এক কোটি লোক রেশনের আওতায় আসছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই না দেশের মানুষ কষ্ট পাক বা খাদ্যে কষ্ট পাক। রাজনীতি করি তাদের জন্য। হয়তো আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন তাদের কল্যাণের কারণে। রাখে আল্লাহ মারে কে? দেশের এমন কোনো জায়গা নাই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। তারপরও ফিরে এসেছি মানুষের কল্যাণ করার জন্য।
যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সবার সহযোগিতা দরকার। সবাইকে কাজ করতে হবে। শুধু সমালোচনা করলে হবে না।
২১ আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা কথা তুলে দরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন। সেজন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। আজকে ২০২২ প্রায় ১৮ বছল হয়ে গেলো। যারা স্প্রিন্টার নিয়ে আছে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ। যতো বয়স বেড়েছে তত খারাপ হচ্ছে।
‘আমি সাধ্যমতো করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা যা হারিয়েছে তাতো আমরা দিতে পারবো না। এই যে কষ্টগুলো নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে, এগুলো কেউ চিন্তা করে? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বারবার আঘাতের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
২১ আগষ্ট গ্রেনেট হামলার সময়ে কর্নেল রশিদ, জাহিদ বাংলাদেশে ছিলো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন দেখছে যে আমি মরি নাই তখন তারা দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে। তাহলে তাদের কে এনেছিলো। যদি সরকার থেকে সাহায্য না করে তাহলে তার আসলো আবার চলে গেলো কিভাবে? খালেদা জিয়া যেভাবেই হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করেছে।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্যগুলো একটু অনুসরণ করেন। কোটালিপাড়ায় বোমা পুতে রেখেছিলো, তখন খালেদা জিয়া বলেছিলো, আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আবার বলেছিলো শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসা তো দুরের কথা বিরোধীদলও হতে পারবে না। কারণ তাদের উদ্দেশ্যই ছিলো আমাকে মেরে ফেলা।
তিনি বলেন, বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ মেরেছে, এটাই তাদের উদ্দেশ্য। এখন তাদের সাথে কথা বলতে হবে। নির্বাচনে আনতে হবে। কেন? দেশে কি আর মানুষ নেই। দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা সেই সন্ত্রাসের সময়ে ফিরে যাবে নাকি উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে থাকবে।
এ সময় আবার ষড়যন্ত্র হতে পারে আশঙ্কা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান যাতে না ঘটতে পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে ২১ আগষ্ট নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পরে তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
সেদিনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা গ্রেনেড যদি ট্রাকের ওপর পরতো আমরা কেউ রেহাই পেতাম না।
২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার বিষয়ে সংসদে নিন্দা প্রস্তাব নিতে না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম আলোচনা করতে। দিলো না। বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে আমি কথা বলতে চাইলাম। আমার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হলো। খালেদা জিয়া বললো, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ রক্তাক্ত সেখানে পুলিশ লাঠিচার্জ করলো, টিয়ারসেল মারলো যাতে আক্রমণকারীরা সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। যখন দেখলো আমি মরি নাই। সেদিন সেই রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে খুনিদের বিদেশ পাঠিয়ে দিলো। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি দিয়ে আলামত ধুয়ে দিচ্ছিলো। রাতারাতি ধুয়ে মুছে ফেললো।
তিনি বলেন, একটা গ্রেনেড তখনো বিস্ফোরিত হয়নি, আরও কয়েকটা বিস্ফোরিত হয়েছিলো।একটা গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিলো রমনা হোটেলের পাশে। আরও কয়েক জায়গায় পাওয়া গিয়েছিলো। আরেকটা পাওয়া গিয়েছিলো জেলখানায়। ওই যে গ্রেনেডটা বিস্ফোরিত হয়নি। এক আর্মি অফিসার এটা ধ্বংস করতে বলে। তখন এক তরুণ অফিসার বলেছিলো, এটা আলামত হিসেবে রাখতে হবে। কেন সে রাখতে হবে বললো, এজন্য তাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়। তাহলে এ থেকে কি বলা যায়? এরা যে এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আর প্রকাশ্য দিবালোকে এই ধরনের ঘটনা সরকাররের সংশ্লিষ্ট না থাকলে কিভাবে সম্ভব?
সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগে অফিসে আসতে পারতাম না, পুলিশ ঘিরে থাকতো। আমাদের সমাবেশ মিছিল করতে দেওয়া হতো না। অথচ সেদিন কোনো পুলিশ ছিলো না। লক্ষ্য ছিলো আমাকে হত্যা করা এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা।
‘আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান করেছে, একাত্তরে চেষ্টা হয়েছে..জিয়া চেষ্টা করেছে..আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী..আজকে গুম খুন নিয়ে কথা বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জিয়ার আমলে যাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই সেনা ও বিমানবাহিনীর যত অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে তাদের সামনে নিয়ে আসা দরকার।’
এ সময় বিএনপি সরকারের শাসনামলের দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
‘নাছিম (আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম), সাবের (সাবের হোসেন চৌধুরী), মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। সেই অত্যাচারের আবার ভিডিও চিত্র করে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারা সেই চিত্র দেখে হাসাহাসি করেছে।’