বিক্ষোভকারীদের মূল শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে লঙ্কান বাহিনী

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের মূল শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রেসিডেন্ট অফিসের বাইরে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে শপথ নেয়ার পরপরই এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভস্থল থেকে বহু তরুণকে আটক করে পুলিশ। তবে এ সংখ্যা আপাতত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, যেসব তাঁবুতে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান করছিল, সেগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এ সময় একজন সাংবাদিক মারধরের শিকার হন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নিরাপত্তাবাহিনীর শতাধিক সদস্য ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অভিযানে অংশ নেন। তারা অনেককে গ্রেফতার করেন এবং প্রায় চার মাস ধরে সেখানে তৈরি করা তাঁবুগুলো গুঁড়িয়ে দেন। জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতিবার নতুন আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট রনিল। তার স্বাক্ষর করা গেজেটে সারাদেশে সামরিক বাহিনীকে পাবলিক অর্ডার বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে শুক্রবার ভোর থেকে আবার বিক্ষোভ শুরু হয়। এসব বিক্ষোভে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থেকে শুরু করে সাধারণ লঙ্কানরাও অংশ নেন। বিক্ষোভের আয়োজক চামিরা দেদ্দুওয়াগে বলেন, এটা ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পিত হামলা। তারা আসলে বর্বরোচিতভাবে লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। যা ঘটেছে, তা হলো ক্ষমতার সস্তা প্রদর্শন। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন দিনেশ গুনাবর্ধনে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহের শপথ নেয়ার এক দিন পর শুক্রবার শপথ নেন তিনি।
টেম্পল ট্রিতে গুনাবর্ধনের শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। কলম্বো শহরের সরকারী স্থাপনায় অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কয়েক ঘণ্টার মাথায় এই শপথ অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রীর শপথের পরই দেশটির ১৮ মন্ত্রীও শপথ নেন। এই শপথেও রনিল বিক্রমাসিংহে উপস্থিত ছিলেন। শ্রীলঙ্কার ছয়বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন বৃহস্পতিবার। পার্লামেন্ট ভবনে দেশটির প্রধান বিচারপতি জয়ন্তা জয়সুরিয়া তাকে শপথ বাক্য পড়ান। ৭৩ বছর বয়সী প্রবীণ রাজনীতিবিদ রনিল বুধবার সংসদীয় ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। শপথ গ্রহণের লাইভ সম্প্রচারে দেখা যায়, রনিল ও তার স্ত্রী কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করছেন। এর পরপরই লাইভ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুত সমস্যার কারণে এ ঘটনা ঘটে।
শপথ নেয়ার সময় শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা নতুন প্রেসিডেন্টের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শ্রীলঙ্কার সরকারী সূত্র জানিয়েছে, সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে দেশকে বের করে আনতে তিনি শীঘ্রই ৩০ মন্ত্রী নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। তবে রনিল বিক্রমাসিংহেকে মানতে নারাজ বিক্ষোভকারীরা। তারা আবার রাজপথে নেমে এসেছেন এবং বলছেন, রনিল আমাদের প্রেসিডেন্ট নন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। শপথের পর রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, সরকারকে যারা বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবেÑ তাদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।
রনিল বিক্রমাসিংহে দেশটির একজন ঝানু রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। বুধবার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটে রনিল বিক্রমাসিংহে মোট ২২৫ ভোটের ১৩৪ ভোট পান। দুল্লাস আলহাপেরুমা ৮২ ও অনুঢ়া কুমারা দিসানায়েকে তিন ভোট পান। পরাজয় মেনে নেন দুল্লাস আলহাপেরুমা। জয়ের পর রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, সঙ্কটে জর্জর শ্রীলঙ্কার বিভক্তির অবসান হয়েছে। পার্লামেন্টে দেয়া বিজয়ী ভাষণে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এখন আর কোন বিভক্তি নেই।’ পরাজিত প্রার্থী দুল্লাস আলহাপেরুমা বলেন, আমরা আশা করব নয়া প্রেসিডেন্ট জনতার দুর্ভোগের কথা শুনবেন। তিনি বলেন, আমি পার্লামেন্ট সদস্যদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আমি আশা করছি অন্তত এখন আপনারা জনগণের দুর্ভোগের কথা শোনার মানসিকতা গড়ে তুলবেন। প্রবীণ রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কারণ তারা রনিলকে রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে মনে করে। বিক্ষোভকারীদের নেতা মেলানি গুনাথিলাকে বলেন, আমরা বর্তমানে আমাদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করছি এবং পুনর্গঠন করছি। আমরা এই ফল আশা করিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা খুব ভাল করেই জানি যে, রনিল বিক্রমাসিংহে গোতাবায়া রাজাপাকসের মতো নন। তিনি আরও ধূর্ত ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি জরুরী অবস্থা জারি করে আমাদের ওপর অত্যাচার করেন। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কা এমন একজন নেতা পাওয়ার দাবিদার যিনি আসলে জনগণের জন্য চিন্তা করেন, তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে না।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর পদত্যাগ করেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান গোতাবায়া রাজাপাকসে। সিঙ্গাপুর পৌঁছার পরপরই ইমেলে দেশটির স্পীকার বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। ১৯৭৮ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম দেশটির কোন প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলেন।