সিলেটে রোটারি নতুন বর্ষ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন ॥ বন্যাদুর্গত এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প ও পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে

8
সিলেটে রোটারি নতুন বর্ষ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রেস কনফারেন্সের কমিটির চেয়ারম্যান ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রোটারিয়ান ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ।

রোটারি নতুন বর্ষ উপলক্ষে সিলেটে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় নগরীর মানিকপীর রোডস্থ জালালাবাদ রোটারি হাসপাতাল এর সম্মেলন কক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন রোটারি সিলেট জোন প্রেস কনফারেন্স কমিটির চেয়ারম্যান ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রোটারিয়ান ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ।
রোটারি আন্তর্জাতিক ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮২ এর জেলা গভর্নর রুহেলা খান চৌধুরী’র পক্ষে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় গণমাধ্যম কর্মী, সিলেটের বিভিন্ন রোটারি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোটারিয়ান ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ বলেন, মানুষের সেবা ও কল্যাণের লক্ষ্যে রোটারি জেলা ৩২৮২ বহুমাত্রিক কার্যক্রম অব্যাহতভাবে পরিচালনা করছে। এরপরও ২০২২-২০২৩ নতুন রোটারি বর্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেগুলো হলো- নারীর ক্ষমতায়, পরিবেশের উন্নয়ন ও পরিবেশগত সহায়তা কার্যক্রম, ছাত্রছাত্রীদের জন্য গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত শিক্ষা সহায়তা, সুবিধাবঞ্চিত প্রবীণদের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের পরিচর্যায় সহায়তামূলক ভূমিকা রাখা, তরুণদের অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আত্ম-উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ বলেন, পল পার্সিবাল হেরিস তাঁর তিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে ১৯০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার শিকাগো শহরে রোটারি আন্দোলন শুরু করেন। বর্তমানে পৃথিবীর ২০০ দেশে ৩৬ হাজার ক্লাবের ১৪ লক্ষাধিক রোটারিয়ান মানবতার সেবার কাজ করছেন। ১৯৩৭ সালের ২২ ডিসেম্বর রোটারি ক্লাব ঢাকা গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয়।
রোটারির উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, পোলিও নির্মূলে সারা পৃথিবীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে রোটারি। বর্তমানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কিছু এলাকা ব্যতীত বিশ্ব থেকে পোলিও র্নির্মূল হয়েছে। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ সনদ তৈরিতে ৪৯ জন রোটারিয়ান যুক্ত ছিলেন। যা বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে রোটারির অবদানের একটি মাইলফলক। এমনকি ২০০৮ সালে লসএঞ্জেলস কনভেনশনে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৬২৪টি বই সংগ্রহ করে গ্রিনিস বুক এ নাম অন্তর্ভুক্ত করেছিল রোটারি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফাউন্ডেশন হিসেবে ‘দি রোটারি ফাউন্ডেশন’ স্বীকৃত। ১৯১৭ সালে মাত্র সাড়ে ২৬ ডলার দিয়ে যাত্রা শুরু করে রোটারি ফাউন্ডেশন বর্তমানে প্রতি বছর সর্বোচ্চ ১ বিলিয়ন ডলার মানবতার কল্যাণে ব্যয় করে। পৃথিবীর ৭টি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে ‘রোটারি পিস স্কলারশিপ’ বৃত্তি দেয়া হচ্ছে।
রোটারিয়ান ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ আরো বলেন, ১৯৯৯ সালে জালালাবাদ রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে সিলেটে প্রতিবন্ধী হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিবন্ধী হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে অসংখ্য রোগী প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে এ হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে কৃত্রিম পা তৈরি ও সংযোজন করা হচ্ছে।
ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ তাঁর বক্তব্যে রোটারির সেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজ গণমাধ্যমে তুলে ধরায় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং নতুন বর্ষে আরো বেশি সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন রোটারি ৩২৮২ পাস্ট ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর রোটারিয়ান ডা. মঞ্জুরুল হক চৌধুরী, পাস্ট ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ইঞ্জিনিয়ার এমএ লতিফ ও পাস্ট ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর শহীদ আহমদ চৌধুরী।
এ সময় ডা. মঞ্জুরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, রোটারি ক্লাব জন্মলগ্ন থেকেই আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাসে সারাদেশে ১২ হাজার রোটারিয়ান একযোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সিলেটে চলমান বন্যার্ত মানুষের সাহায্য সহযোগিতার জন্য ইতিমধ্যে রোটারি ডিস্ট্রিক্ট এর মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকার বেশি ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বন্যার্তদের শুকনো ও রান্না করা খাবারের পাশাপাশি শিশুদের জন্য তরল ও গুঁড়ো দুধ দেয়া হচ্ছে। এমনকি বয়স্কদের জন্য হরলিকসসহ পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া, বন্যাদুর্গত এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। বন্যা পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ডা. মঞ্জুরুল হক চৌধুরী। তিনি মানবতার কল্যাণ নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম কর্মীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জালালাবাদ রোটারি হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, রোটারি এরিয়া ডিরেক্টর হানিফ মোহাম্মদ, জিরো আওয়ার চেয়ারম্যান আব্দুন নুর রাহেল, রোটারি ডেপুটি গভর্নর মো. কাওছার হোসেন, এসিস্ট্যান্ট গভর্নর শাখাওয়াত হোসেন, জোন কো-অর্ডিনেটর সাহেদ আহমদ, জুম্মান তারেক, সিলেট ইম্পেরিয়ালের প্রেসিডেন্ট হাসান কবির চৌধুরী, রোটারিয়ান মঞ্জুর আল বাছেত, রোটারিয়ান ইকবাল হোসেন, রোটারিয়ান মো. তাজ উদ্দিন আহমদ লস্কর, রোটারিয়ান আক্তার হোসেন, রোটারিয়ান মওদুদ আহমদ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি