বন্যাউত্তর পুনর্বাসন

18

সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বন্যাকবলিত মানুষ। বন্যার দুর্ভোগের চেয়ে বন্যাউত্তর দুর্ভোগ কোন অংশেই কম নয়। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অনেকের বাড়ি ঘর, গবাদিপশু, ফসলের জমি, ঘরের আসবাপত্র, মজুদ খাদ্যসহ সব। আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা নিরাপদ স্থান থেকে ঘরে ফিরে তারা মুখোমুখি হচ্ছেন এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির। মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই, ঘরে খাবার নেই, সুপেয় পানির অভাব। দেখা দিয়েছে রোগ-বালাই। এসব মানুষকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে তাদের জীবন। নির্মাণ করতে হবে মাথা গোঁজার ঠাঁই। ভেসে যাওয়া ফসলের খেতে নতুন করে শুরু করতে হবে উৎপাদন। আবারও বন্যা হবে কিনা এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও শুরু হবে বেঁচে থাকার নতুন সংগ্রাম। এখনই তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সর্বাত্মক সহযোগিতা।
দুর্গত মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর জন্য দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত বরাদ্দ। যাতায়াত সমস্যায় অনেক দুর্গত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পানিবন্দী হয়ে অনেকে আটকে পড়েছেন দুর্গম কোন স্থানে। সংবাদ পেলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছুটে যাচ্ছেন। সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, সামর্থ্যবান ব্যক্তি এবং তরুণ উদ্যোক্তারা খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য নিয়ে দুর্গতদের পাশে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কোন কোন স্থানে খাদ্যের জন্য হাহাকার।
বন্যার পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষগুলো ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। মানুষের সব হারানোর নির্মম চিত্র উঠে আসছে সংবাদ মাধ্যমে। কারও ঘরে চাল নেই, নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের সব। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অনেকের বাড়ি-ঘর। সহায় সম্বলহীন মানুষগুলো এই মুহূর্তে কাজও পাবে না। অভাব অনটনের মধ্যেও শুরু হবে স্বাস্থ্য বিপর্যয়। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে ডায়রিয়াসহ নানা সংক্রামক ব্যাধির উপদ্রুব। সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করলেও এত মানুষকে একসঙ্গে সহায়তা দেয়া খুব কঠিন। কোন না কোন ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে এবং যাবে। অতীতে আমাদের সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংগঠন ও ব্যক্তি দুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের অগ্নিকা-ে অগ্নিদগ্ধ মানুষকে রক্ত দেয়ার জন্য কত মানুষকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এবারও সরকারের একার পক্ষে সকল দুর্গত মানুষকে সহায়তা দিয়ে আগের জীবনে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। দেশের সকল মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে সরকারের পক্ষে এই কাজ সহজ হবে। সবাই নিজেদের অবস্থানে থেকে যথাসাধ্য খাদ্য, আশ্রয়স্থল নির্মাণ, চিকিৎসা ইত্যাদি সহায়তা দিলে দুর্গত মানুষগুলো বেঁচে থাকার নতুন পথের সন্ধান করতে পারবেন।