মিজানকে সম্মান জানাতে হবে

12

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তবে কখনও কখনও তার কাজ ও আচরণ চারপাশের মানুষকে বিব্রত, লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ করে। আবার মানুষের মতো মানুষের কাজ সমাজে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। এতে অন্যরা উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত ও উদ্যোগী হয়। ব্যক্তি মানুষ যখন কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে স্বউদ্যোগে আশপাশের বহু মানুষের কষ্ট লাঘবে তৎপর হন এবং মহান উপকারের নজির স্থাপন করেন তা সমাজে উদাহরণ সৃষ্টি করে। একটি সংবাদপত্রে সম্প্রতি এমনই একজন মানুষের সচিত্র পরিচয় ও কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে।
যশোরের কেশবপুরের বৃক্ষপ্রেমিক মিজানুর গ্রামবাসীদের বজ্রপাত থেকে সুরক্ষায় এবং পরিবেশ উন্নয়নে প্রায় পাঁচ হাজার তালবীজ রোপণ করেছেন। যার পঞ্চাশ ভাগই বেড়ে উঠে পরিণত হয়েছে উঁচু গাছে। বর্ষায় ফাঁকা মাঠে বজ্রপাতের হাত থেকে সুরক্ষায় তালগাছ ভূমিকা রাখে।
বজ্রপাত উঁচু তালগাছে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে, সমতলে থাকা মানুষ বজ্রপাতের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পায়। কৃষকের কষ্টের কথা ভেবে বিলের মধ্য থেকে ফসল আনতেও মিজানুর তৈরি করেছেন দেড় কিলেমিটার রাস্তা। উদ্যোগ নিয়ে ফসলের মাঠে তৃষ্ণার্ত কৃষকের জন্য বসিয়েছেন নলকূপ। এত কাজ তিনি নীরবেই করে চলেছেন। এভাবে এলাকার মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘কৃষকবন্ধু’। সমাজে এমন বন্ধু বা সুহৃদ আছেন অনেকেই। যারা মানুষের কল্যাণব্রত নিয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন নানা শুভকর্মে। প্রচারের জন্য লোক দেখানো সাহায্য নয়, নয় দান-অনুদানের বড়াই।
মানুষের উপকারের এক শ’ একটা পথ খোলা আছে। প্রয়োজন শুধু উদ্যোগের। সবটাই সরকার করে দেবে, আমরা বসে থাকব আর সরকারের সমালোচনা করব, কেন তারা এই দরকারি কাজে অর্থায়ন করছে না- এইসব সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা জরুরী। মানুষ একক কিংবা সম্মিলিতভাবে মানবকল্যাণে দারুণ সব কাজ করতে পারে। এটিই সামাজিক উদ্যোগ। সমাজের প্রাণশক্তি এই সদিচ্ছা ও সক্রিয়তার মধ্যেই নিহিত। আমরা বিশ্বাস করতে চাই সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে একজন না একজন এরকম মিজানুর রহমান রয়েছেন, যার সুন্দর ও কল্যাণকামী হৃদয়ের পরিচয় পেয়েছেন স্থানীয় মানুষ। কমবেশি এলাকার মানুষ ওই পরোপকারী মানুষের কাছ থেকে কোন না কোনভাবে উপকৃত হয়েছেন। এ সব মিজানকে সম্মান জানাতে হবে। তুলে ধরতে হবে তাদের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মানুষের উপকারে আত্মত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পরিচয়।