অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

3

বাজেটের আগে দেশের এবং সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক বাস্তবতা খতিয়ে দেখার আবশ্যকতা রয়েছে। এ থেকে করণীয় সম্পর্কে একটি দিকনির্দেশনা মিললেও মিলতে পারে। প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী মতবিনিময় করেন, গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। এসব আলাপচারিতা থেকে অনেক সময়েই সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগাম জানা যায়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও হয়ে থাকে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় কালো টাকা সাদা করা নিয়ে। অর্থনীতির ভাষায় এই কালো টাকার প্রকাশ্যে চলে আসার বিষয়টিকে বলা হয় অপ্রদর্শিত আয়। ইতোপূর্বে যে অর্থ প্রর্দশন করা হয়নি, এখন প্রদর্শন করা হচ্ছে। সেটাও ট্যাক্স বা কর দিয়ে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে। কেননা, গোপন অর্থ প্রকাশ্য হিসেবের মধ্যে চলে আসে। কিন্তু নৈতিকতার বিচার ভিন্ন। কালো টাকা উপার্জন হয় কালো পথে। সেটির সঙ্গে অপরাধ প্রবণতার সম্পৃক্তি থাকে। একজন নাগরিক অবৈধ পথে কিংবা বলা যাক অনৈতিক পথে যে বিপুল অর্থোপার্জন করলেন, সেই টাকার ওপর কর দিয়ে তিনি ‘সাদা মানুষ’ হয়ে গেলেন। এতে বহু অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়। সমাজ বিত্তবৈভবের কাছে নতজানু হয়। যা নৈতিকতাকেও খর্ব করে।
এবার বিশ^ব্যাপী মন্দাবস্থা এবং দেশে ডলারের অসহনীয় উল্লম্ফনের বাস্তবতায় নতুন বাজেট ঘোষণার সময় চলে এসেছে। অভিনব একটা কথাও শোনা যাচ্ছে। সেটি হলো, বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা দেশে অর্থ ফিরিয়ে আনলে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে সাধারণ ক্ষমার আওতায় চলে আসতে পারবেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকর্মীদের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অর্থ পাচারকারীদের ওই সুযোগ দানের কথা বলেছেন। আমাদের দেশে এর আগে এ ধরনের কথা কোন অর্থমন্ত্রী বলেননি। তবে জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ তাদের দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করছে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার একটি কৌশল হচ্ছে সম্পদ বিদেশে রেখেই তাদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করা। এটি হচ্ছে বাড়ি-গাড়ির মতো স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে। অন্যটি হচ্ছে নগদ অর্থ ফিরিয়ে আনা। বিদেশে ইতোমধ্যে যারা বিপুল সম্পদ গড়েছেন, আয়কর রিটার্নে তারা তা দেখাতে পারবেন। এ জন্য তাদের কোন প্রশ্ন করা হবে না। কর দিতে হবে সর্বোচ্চ পনেরো শতাংশ।
আমাদের দেশ থেকে নানা সময়ে আমলা, ব্যবসায়ী রাজনীতিকসহ বহু নাগরিক বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে সরিয়েছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা। পাচারকারীরা যদি সরকারের দেয়া সুযোগ গ্রহণ করেন, তাহলে দেশ যে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু নৈতিক বিবেচনায় এটি হিতকারী হবে না বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।