সিয়াম সাধনার মাস

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর, রমজানুল মুবারাকের ২৬তম রজনী। মাহে রমজানের লাইলাতুল ক্বদর মুসলিম জীবনে এক অতি পুণ্যময় ও অনন্য রজনী। এ রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে সূরা ক্বদরে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা ক্বদরে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঘোষণা করেন: অবশ্যই আমরা (আমি) সেটা (কুরআন শরীফ) ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি অবগত লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে? লাইলাতুল ক্বদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। এতে রুহ ও ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের আদেশে প্রত্যেক কাজের জন্যে অবতীর্ণ হন। তা প্রভাত পর্যন্ত শান্তিময়। হযরত সুফিয়ান সোরীর বর্ণনা মতে: বরকতওয়ালা এ রজনীর প্রতিটি নেক কাজ- রোজা, নফল ইবাদত হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদত বন্দেগীর সমতুল্য।
বিশিষ্ট রাসূল প্রেমিক শ্রেষ্ঠ হাফেজে হাদিস হযরত আবু হুরায়রা (রাদি) বলেন, রমজান মাসের শুভাগমন হলে আল্লাহর নবী (স.) বলতেন: তোমাদের মধ্যে মোবারক মাস মাহে রমজান এসেছে। আল্লাহ জাললে জালালুহ তোমাদের ওপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন, বেহেশতের দ্বারগুলো খুলে দিয়েছেন, দোযখের দরজায় তালা লাগিয়েছেন আর শয়তানদের করেছেন শিকলাবদ্ধ। এ মাসে এমন এক রজনী রয়েছে যা সহস্র রজনী হতে উত্তম। যে ব্যক্তি এর খায়ের ও বরকত থেকে বঞ্চিত (যেন) সে সব কিছু থেকে বঞ্চিত। হযরত আবু হুরায়রা (রাদি) হুজুর (স.)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন : যে ব্যক্তি পূর্ণ ঈমান ও আত্মশুদ্ধির মনোভাব নিয়ে এ রাতে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকেন আল্লাহ তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। (তাফসীর ইবনে কাসীর পৃ: ৫১৩)।
হযরত কা’ব (রাদি) থেকে বর্ণিত আছে, ৭ম আকাশে জান্নাতের অদূরে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামক গাছের মাঝামাঝি হযরত জিবরাঈলের নিবাস। আবার উক্ত গাছের শাখা-প্রশাখায় বাস করেন অসংখ্য, অগণিত ফেরেশতা। মু’মিনদের প্রতি স্নেহপরায়ন এ সব ফেরেশতা জিবরাঈলের (আ:) নেতৃত্বে এ রাতে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সূর্যাস্তের পর পরই পৃথিবীতে অবতরণ করেন; ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। কিন্তু মুশরিক, জাদুকর, নেশাখোর, জিনাকার, আত্মীয়ের প্রতি অনুদার প্রভৃতি খারাপ লোক এবং ময়লা-আবর্জনাযুক্ত অপবিত্র স্থান থেকে দূরে থাকেন। পক্ষান্তরে মু’মিনদের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করে সারারাত দোয়া করতে থাকেন আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছাতে থাকেন ইবাদতে মশগুল সকল মুমিনের কাছে।
পরিতাপের সঙ্গে আমরা বলে থাকি যে, আজকের সমাজ হচ্ছে- কুসংস্কার ও অনৈতিকতার রমরমা বাজার। এ সুবাদে এ ধরনের বরকতময় রাত ও মাসগুলোতে আমরা অজ্ঞতাবশত বা কুসংস্কারজনিত কারণে এমন কতেক কাজ করে বসি যা ইসলাম যেমন মোটেই সমর্থন করে না আর তেমন নয় কোন পুণ্য ধর্মের কাজ। এ ধরনের অযথা কাজকর্ম যেমন নিজের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে আর তেমনি সমাজে অন্যান্য মুমিন মুসলমানের ইবাদত-বন্দেগীতেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। তদুপরি অপচয়ও বৈকি! যেমন আতশবাজি, পটকা ফুটানো, এদিক ওদিক দৌড়িয়ে হৈ হুল্লোড় করা, খানাপিনা প্রভৃতিতে বাহুল্য ব্যয়। এ সকল কাজ সর্বোতভাবে পরিহার করা উচিত। আমরা ঘরে, মসজিদে নফল নামাজ, তিলাওয়াত, দান-সদকা ও প্রিয়জনদের কবর জিয়ারতে রজনীটি অতিবাহিত করতে পারি। বিশেষ করে করোনাউত্তর এ মুক্ত বাতাসে আবার ছেলেমেয়ে, পরিজন নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের দরবারে সমর্পিত মনে ইবাদত বন্দেগীতে কাটাতে পারি। হাজার মাসের সেরা এ রজনীতে ইবাদত-বন্দেগীর মূল্য যেমন অশেষ, অতুল তেমনি একে হেলাফলায় কাটানো এক অভিশপ্ত জীবনের দিকে আমাদের হাতছানি দিতে পারে।
আল্লাহপাক আমাদেরকে এ মহামূল্যবান রজনীতে পূর্ণ গাম্ভীর্যসহকারে ইবাদত-বন্দেগী করার তৌফিক দিন।