সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ॥ লাফার্জ খোলাবাজারে পাথর বিক্রি করায় লক্ষাধিক ব্যবসায়ী-শ্রমিকের পথে বসার উপক্রম

35
ছাতক ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আহমদ শাখাওয়াত চৌধুরী সেলিম।

স্টাফ রিপোর্টার :
বহুজাতিক কোম্পানী লাফার্জ হোলসিম সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রি করছে দাবি করে পাথর আমদানীকারকদের সংগঠন ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেছেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মেরে তারা অবৈধভাবে চুনাপাথর ব্যবসার খোলাবাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এ কারণে আমরা চুনাপাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা এ ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
বুধবার বিকেলে নগরের একটি হোটেলের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন পরিষদের নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আহমদ শাখাওয়াত চৌধুরী সেলিম।
তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ভোলাগঞ্জ, তামাবিল শুল্ক স্টেশন ও সুনামগঞ্জের ছাতক, চেলা, ইছামতি, বড়ছড়া, বাগলি দিয়ে চুনাপাথর আমদানী করে ক্রাশিং বা এগ্রিগেট পদ্ধতিতে যুগ যুগ ধরে খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটে পাঁচ শতাধিক ক্রাশার মেশিন এবং লক্ষাধিক ব্যবসায়ী-শ্রমিক এ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। চুনাপাথর আমদানী বহন ও বাজারজাতকরণ প্রতিটি ধাপে সরকারের অনুমতি নিয়ে সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি।’
তিনি আরও করেন, ‘লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট উৎপাদন ও বিপননের জন্য নিবন্ধিত একটি কোম্পানী। তাদের কোম্পানীর সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের ভূমি, গ্যাস প্রভৃতি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। কোম্পানী তাদের সিমেন্ট ক্লিংকার উৎপাদনের কাঁচামাল চুনাপাথরের জন্য ছাতক থেকে বিশ্বের অন্যতম ক্রস বর্ডার কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে ভারতের মেঘালয় থেকে চুনাপাথর আমদানী করে থাকে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘লাফার্জ মেঘালয় থেকে আমদানীকৃত এসব চুনাপাথর শুধুমাত্র তাদের সিমেন্ট উৎপাদনেই ব্যবহার করবে বলে বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও চুনাপাথর ক্রাশিং (এগ্রিগেট) করে খোলাবাজারে বিক্রি করছে।’
এর ফলে লক্ষাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক পথে বসবে বলে মনে করেন পরিষদের নেতারা। তারা বলেন, ‘কোম্পানীর ভিতরে প্ল্যান্ট বসিয়ে ক্রাশিং করে ক্লিয়ার এগ্রিগেটের নামে খোলাবাজারে বিক্রি শুরু করে করোনা মহামারী শুরুর পর থেকে। এর ফলে বৃহত্তর সিলেটের শুল্ক স্টেশনের সমস্ত আমদানীকারকরা বড়ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাথর ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ শতাধিক ক্রাশার মিলের ব্যবসায়ীগণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মত পুঁজি হারিয়ে ব্যাংক দেওলিয়া হয়ে পড়বে। লাখ লাখ শ্রমিক হবে বেকার।’
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘যেখানে চুনাপাথর আমদানী ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা বাডুজ্যিকভাবে সরকারকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারিত ভ্যাট, অগ্রিম কর দিয়ে ব্যবসা করছেন সেখানে লাফার্জ সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামালের ঘোষণা দিয়ে অত্যন্ত কম হারে ভ্যাট ও কর দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেছে। আমাদের জানামতেÑ ট্রেডিং করার সরকারের কাছ থেকে তারা কোনোধরনের অনুমতি পায়নি।’
তারা আরও জানান, লাফার্জ বর্তমানে দিনে প্রায় এক লাখ আশি হাজার ঘনফুট চুনাপাথর ক্রাশিং করে সরবরাহ করছে। তারা পরিকল্পনা করছে আগামীতে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ চল্লিশ হাজার ঘনফুট চুনাপাথর বিক্রি করবে। এজন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করছে এবং বিদেশ থেকে নতুন যন্ত্রপাতি আমদানী করছে। কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে প্রতি বছর ৫০ লাখ মেট্রিক টন আমদানী করবে এবং নাম মাত্র সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য ১০ লাখ মেট্রিকটন চুনাপাথর ব্যবহার করবে। অবশিষ্ট ৪০ লাখ মেট্রিকটন চুনাপাথর ক্রাশিং করে খোলাবাজারে বিক্রি করবে। আমরা সিলেট বিভাগের শুল্ক স্টেশনগুলোর আমদানীকারক সবাই মিলে ২০ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিকটন চুনাপাথর আমদানী করে থাকি।
তিনি বলেন, ‘লাফার্জের কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে আমদানী করার ফলে তাদের খরচ হয় প্রতিটনে ১ হাজার সাতশ টাকা এবং আমাদের আমদানী ও ক্রাশিংসহ খরচ পড়ে ৩ হাজার সাতশ টাকা। এতে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে এবং সাধারণ ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে, ২০০৯ সালে প্রথম আমাদের চুনাপাথর ব্যবসায় শকুনের নজর ফেলে এই কোম্পানী। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে আমরা লিখিত ও মৌখিকভাবে তাদের দুরভিসন্ধিমূলক কাজের প্রতিবাদ করি। সে বছর আমরা আপত্তি জানালে কর্তৃপক্ষ চুনাপাথর বিক্রি বা বিতরণের কোনো পরিকল্পনা লাফার্জের নেই বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছিল।’
এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাডুজ্য মন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বাের্ড, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্টসহ সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচজন এমপি ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ এমপিকে এবং ছাতক পৌরসভার মেয়রসহ স্থানীয় প্রশাসনকেও অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে লোভ সামলাতে না পেরে লাফার্জ হোলসিম চুনাপাথর দিয়ে চুন প্রস্তুত করতে শুরু করবে। সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে আমাদের চুন শিল্পেও।’ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জীবিকা ও জীবনের কথা বিবেচনায় লাফার্জের এই অবৈধ ব্যবসা দ্রুত বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, সুনমাগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং বিভাগের ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা, সব শুল্ক স্টেশনের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।