চিকিৎসাসেবার দুরবস্থা

11

দীর্ঘদিনের অবহেলা, উপযুক্ত তদারকির অভাব, সমন্বয়হীনতা, চিকিৎসক ও চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের একটি অংশের দায়িত্ববোধের অভাব এবং সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। এর মাসুল গুণছে সাধারণ মানুষ। যে চিকিৎসা ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে করা সম্ভব, সেটিও বেশির ভাগ সময় সেখানে করানো যায় না। কারণ এসব হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি যেমন আছে, তেমনি আছে রোগ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগের অভাব।
যন্ত্রপাতি থাকে না অথবা অকেজো হয়ে থাকে। ইচ্ছাকৃতভাবে অকেজো করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিনা মূল্যে বিতরণের ওষুধ রোগীরা ঠিকমতো পায় না। আর অতি উচ্চমূল্যের কারণে বেসরকারি চিকিৎসা বেশির ভাগ মানুষের নাগালের বাইরে। এসব কারণে বেশির ভাগ মানুষ সময়মতো চিকিৎসা পায় না। চিকিৎসার অভাবে রোগীর অবস্থা যখন খুব খারাপ হয়ে যায় তখন তাকে নিয়ে যেতে হয় রাজধানী বা অন্য কোনো বড় শহরের হাসপাতালে, যে খরচ বহন করা বেশির ভাগ রোগীর পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। জানা যায়, কেবল চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আছে বিশুদ্ধ পানির অভাব, বাংলাদেশে বিশ্বের সর্বোচ্চ বায়ুদূষণসহ নানা কারণ, যা মানুষকে বেশি করে রোগাক্রান্ত করে।
চিকিৎসার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। ভুল চিকিৎসার অভিযোগও প্রচুর। প্রচুর বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর একটি বড় অংশেরই শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেই সঙ্গে আছে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় বা ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে চিকিৎসকের সনদপত্র বিক্রি। চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষা দূরে থাক, অনেকে মাদরাসায় লেখাপড়া করেও কেবল অর্থের বিনিময়ে সনদপত্র কিনে চিকিৎসক বনে যাচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠান খুলে মানুষকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, গত বুধবার রাজধানীর মালিবাগের প্যারামাউন্ট টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ভুয়া ডিগ্রি চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জানা যায়, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৬ সাল থেকে এমবিবিএস, বিডিএস, এমফিল, পিএইচডিসহ নানা বিষয়ে সনদপত্র বিক্রি করে আসছিল। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি এমবিবিএস চিকিৎসকের কয়েক শ সনদপত্র বিক্রি করেছে, যারা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার নামে রোগীর মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করছে। গোয়েন্দা পুলিশ এমন কয়েকজন ভুয়া চিকিৎসককেও গ্রেফতার করেছে।
চিকিৎসা পেশা অন্য দশটি পেশার মতো নয়। এখানে চিকিৎসকের সামান্য ভুলেও রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই চিকিৎসাশিক্ষার সুনির্দিষ্ট মান রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। আর ভুয়া চিকিৎসক তো খুনিরই সমতুল্য। যেসব সিন্ডিকেট ভুয়া চিকিৎসক তৈরি করে, অর্থের বিনিময়ে সনদপত্র বিক্রি করে এবং যারা সেসব সনদপত্র নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা অবাক হই, খোদ রাজধানীতে এমন একটি প্রতারকচক্র ২৬ বছর ধরে এমন প্রতারণা চালায় কী করে! সেই সঙ্গে দেশের চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে আরো উদ্যোগ নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়নে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।