সিয়াম সাধনার মাস

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ পবিত্র মাহে রমজানের সপ্তম দিবস। এ মাসে একটি ফরজ ইবাদতের সওয়াব সত্তরটি ফরজের সমতুল্য। আর প্রতিটি নফল ইবাদতে রয়েছে অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সওয়াব। তাই এ মাসের বহুমাত্রিক ইবাদত বন্দেগির কারণে সঙ্গতই মুমিনকে বেশি বেশি পাক পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। আর এই পবিত্রতা অর্জনের সাধনা আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান নানা আধুনিক রোগ বালাই থেকে পরিত্রাণের সোপান বলে বর্ণনা করছে। পবিত্রতা একজন মানুষের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থা আর অপবিত্রতা নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত অবস্থা। মানুষের কর্তব্য ও বৈশিষ্ট্যই হলো সর্বদা নিকৃষ্টতা পরিহার করে সাধ্যমতো উত্তম ও উৎকৃষ্ট অবস্থায় থাকা। যারা ভালভাবে পবিত্রতা অর্জন করেন, পবিত্র থাকেন আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেন। পরিষ্কার, পরিপাটি, নির্মল অবস্থাকে বলে পরিচ্ছন্নতা। আর বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক ও স্থান বা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতাকে বলে তাহারাত বা পবিত্রতা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায় করার জন্যে শরীর, পোশাক ও স্থান তথা পরিবেশ পবিত্র হওয়া অপরিহার্য। পরিচ্ছন্নতা বা পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসেন। যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে সবাই তাদের ভালবাসে। নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, পবিত্রতাই তিনি পছন্দ করেন। আল্লাহপাক আমাদের উদ্দেশে বলেন, যে ব্যক্তি ভেতরে বাইরে পবিত্রতা অর্জন করে, সে অবশ্যই সাফল্যলাভ করে।-(সূরা আ’লা-১৫)।
আমরা নানা রকম কাজ করি- আমাদের হাত, পা, শরীর ও কাপড় চোপড় ময়লা হয়, ধুলাবালি লাগে। ঘামে শরীর ভিজে যায়, দুর্গন্ধ হয়। আমরা মুখ দিয়ে খাবার খাই, দাঁতে ময়লা লাগে। দাঁত, মুখ পরিষ্কার না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। অকালে দাঁত পড়ে যায়। দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য অজু করার আগে দাঁত মাজতে হয়, মেসওয়াক করতে হয়। মহানবী (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হলে, প্রত্যেক অজুর আগে আমি মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’
অনেকের নখ, চুল বড় হয়। দেখতে খারাপ লাগে। নখ বড় হলে নখে নানা রকম ময়লা জমে, তা খাবারের সঙ্গে পেটে যায় এবং পেটের অসুখ হয়। নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে। জুম্মার দিন নখ কর্তন করা মুস্তাহাব। হামিদ ইবনে আবদুর রহমান স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হুজুরে পাক (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন নখ কাটে, সে সুস্থ থাকে। অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়। বৃহস্পতিবার আছরের পরেও নখ কর্তন করার প্রতি ধর্মীয় পর্যায়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
ওয়াকী হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, হুজুরপাক (স.) এরশাদ করেছেন, হে আয়েশা! তুমি নখ কাটবারকালে প্রথমে মধ্যমা, তারপর কনিষ্ঠা, তারপর অনামিকা এবং সর্বশেষ তর্জনির নখ কাটবে। নখ কাঁচি অথবা চাকু দ্বারা কাটবে। দাঁত দ্বারা নখ কাটা মাকরুহ। বর্ণিত আছে, হুজুরে পাক (স.) নখ কাটার পর উহা মাটি চাপা দিয়ে রাখার হুকুম দিয়েছেন। নখ কাটার পর আঙ্গুলের মাথা ধুয়ে ফেলবে।-(গুনিয়াতুত ত্বালেবীন)।
চুলও ঠিক করে রাখতে হবে। মহানবী (স.) একবার একটি লোককে এলোমেলো চুল দেখে বললেন, এ ব্যক্তি কি চুল ঠিক করার কিছু পেল না? অনেকে শৌচাগার হতে এসে ভালভাবে পরিষ্কার হয় না। শরীর ময়লা, নোংরা থাকলে নানা রকম রোগ হয়। পায়খানা প্রসাবের পর ভালভাবে হাত পরিষ্কার হতে হবে। দিনে একবার গোসল এবং পাঁচবার অজু করার মাধ্যমে দেহ পরিচ্ছন্ন হয়, পবিত্র হয়, মন ভাল থাকে, ফুর্তি লাগে ও কাজকর্মে উৎসাহ আসে।
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) এরশাদ করেছেন : যখন কোন মু’মিন অথবা মুসলিম বান্দা ওজু করে এবং চেহারা ধোয়, (তার চেহারা থেকে) তার চোখের দ্বারা কৃত সব গুনাহ পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে দূর হয়ে যায়। যখন সে তার হাত ধোয়, তার দু’হাতেকৃত সমস্ত গুনাহ তার হাত থেকে পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে দূর হয়ে যায়। অতপর সে ব্যক্তি সমস্ত গুনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। -(মুসলিম)।