সিয়াম সাধনার মাস

3

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী মাহে রমজানের আজ ৪র্থ দিবস। মাহে রমজানের অন্যতম আকর্ষণ ইফতারি ও ইফতার মাহফিল। এটি একটি সুখকর ইবাদতও বটে। রোজা রাখার সময়সীমা এবং ইফতার করার নির্দেশ দিতে গিয়ে আল্লাহসুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, অতপর তোমরা রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।’ এখানে রাত বলতে রাতের সূচনা বা সূর্যাস্তকে বুঝানো হয়েছে। মহানবী হুজুরেপুর নূর (স.) রাতে কোন আহার গ্রহণ না করে অর্থাৎ ইফতার ছাড়া একের পর এক রোজা রেখে যেতে বারণ করেছেন। এ ধরনের রোজা রাখাকে বলা হয় ‘সাওমে বিসাল’। ইফতার গ্রহণ ছাড়া রোজা রাখলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এর দ্বারা অন্যান্য ধর্মীয় অনুশাসন ও পরিবার পরিজনের হক আদায়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। আসলে আল্লাহ তায়ালা কোন মানুষকে সিয়ামের মাধ্যমে উপোস রেখে মারতে চান না, তিনি চান একটি সুনির্দিষ্ট সময় ধরে তার কৃচ্ছ্রতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করতে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসূলে কারীম (স.) প্রতিটি রোজার মাঝখানে রাতে পানাহার, ইফতার বর্জনকে নিষেধ করেছেন। তখন একজন লোক আরজ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (স.) আপনি যে এমনটি করেন! উত্তরে হুজুর (স.) বললেন, তোমরা আমার মতো কে আছো? আমি ওই রকম রোজা রাখি। কেননা আমার দয়াময় আল্লাহ আমাকে খাওয়ান আর পানও করান।’ এ থেকে বোঝা যায়, ‘ইফতার’ রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এর সুষ্ঠুতার মধ্যে সিয়ামের পূর্ণতা নির্ভর করে।
এ সম্পর্কিত হাদিস ও আইন গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে জানা যায় যে, কোন কিছু আহারের মাধ্যমে গোটা দিনের সমাপ্তি টানাই হলো ইফতার। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হয়। আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইরশাদ করেছেন, যতদিন পর্যন্ত লোকেরা (সূর্য ডোবার পর) কালবিলম্ব না করে ইফতার করবে, ততদিন তাদের ওপর মঙ্গল অব্যাহত থাকবে। যখন নিশ্চিতরূপে জানা যায় যে, সূর্য ডুবে গেছে তখন কালবিলম্ব না করে ইফতার করা মোস্তাহাব। দেরি করে ইফতার করা মাকরুহ। তবে মেঘলা দিনে কিছু সময় দেরি করে ইফতার করা ভাল। কেননা দিবাভাগে কেউ সূর্যাস্ত গেছে বলে মনে করে ইফতার করে ফেলল কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সূর্য দেখা দিল। এমতাবস্থায়, লোকটি গুনাহগার হবে না সত্য, তবে তার ওপর এ রোজা ক্বাযা করা ওয়াজিব হবে। এর জন্য দেখুন মা’আরিফুল কোরান (পৃ: ৯৬)।
ইফতারির আইটেমের মধ্যে বর্তমানে আমাদের দেশে টকঝাল মিষ্টিজাত নানা দ্রব্যের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রবল ঝোঁক দেখা যায়। এসব যদি হালাল পথে উপার্জিত হয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয় তবে নাজায়েজের কিছু নেই। সচরাচর বিভিন্ন দেশে আল্লাহর বান্দারা বিচিত্র রকমের পানাহারে অভ্যস্ত। এ সব পানাহার ও খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাই বড় কথা। তবে খোরমা দিয়ে ইফতার করা সবচেয়ে উত্তম। এ ছাড়া মিষ্টিজাত দ্রব্য অথবা পানীয় দ্বারা ইফতার করা ভালো-(আবু দাউদ)। সাহাবী আনাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (মাগরিবের) নামাজের পূর্বে ইফতার করতেন কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি তাজা খেজুর না পেতেন শুকনো খেজুর (অর্থাৎ খোরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (রিয়াজুস সালেহিন)। আমরা ইফতার গ্রহণের সূচনাতে সামান্য খোরমা/ মিষ্টিজাত দ্রব্য কিংবা পানি মুখে দিয়ে সুন্নাতের সাওয়াব পেতে পারি। এরপরই অন্যান্য আহার্য গ্রহণ করা যায়। হাদিস সঙ্কলন দারে কুতনিতে এসেছে: রোজাদারের সামনে যখন ইফতারের জন্য আল্লাহর নিয়ামত খাদ্যদ্রব্য আসে তখন এ বলে শুকরিয়া আদায় করা উচিত, আল্লাহর নামে আরম্ভ করি এবং তারই প্রশংসা করি। প্রভু হে! তোমারই উদ্দেশে আমি রোজা রেখেছিলাম। এখন তোমারই খাদ্য থেকে ইফতার করছি। তুমি পবিত্র ও প্রশংসনীয়। আমার রোজা কবুল কর। তুমিতো সর্বশ্রোতা এবং সবজান্তা।’
করোনা ও অমিক্রন পরবর্তী সময় আমরা পার করছি। এখন মানুষের বহুবিধ অর্থ সঙ্কট, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইফতার সামগ্রীর মূল্য। অনেক গরিব নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্তের ইফতার আয়োজন নেই বললেই চলে। তাদের দিকে সদয় দৃষ্টি দেয়ার জন্য মহানবী (স.) উৎসাহিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ব্যক্তির জন্য তা গুনাহ মাফ এবং দোজখের আগুন হতে নাজাতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। রোজাদারের পুণ্যের সমান পুণ্য লাভ করবে। অথচ রোজাদারের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কম করা হবে না।