শিশুশ্রম বন্ধে ভাতা

2

দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধসহ সরকারের নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও শিশুশ্রম কমছে না। বরং বাড়ছে। এরকমই তথ্য-পরিসংখ্যান উঠে এসেছে ২৬৭টি শিশু সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিবেশিত প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। এসব শিশু প্রধানত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে ছোট ছোট শিল্প-কারখানায়, লেদ মেশিনে, ইটভাঁটিতে, বিড়ি-সিগারেট তৈরিসহ নানা ক্ষেত্রে। যেখানে শুধু উদয়াস্ত পরিশ্রমই নয়, সমূহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নিরাপত্তা ঝুঁকিও বিদ্যমান। শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী শুধু গৃহকর্মেই নিয়োজিত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা চার লাখ ২১ হাজার। এই শ্রমও এই কারণে ঝুঁকিপূর্ণ যে, অধিকাংশ শিশুর গৃহকর্মের কাজেও কমপক্ষে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হয় এক নাগাড়ে। সেই অনুপাতে না আছে পেটপুরে খাবার ও পুষ্টি। বরং প্রতিনিয়ত জোটে বকাঝকা-লাঞ্ছনা-গঞ্জনা-মারধর। নির্মম অত্যাচারে একাধিক মৃত্যুর খবরও আছে। এর পাশাপাশি নারী গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে রয়েছে অহরহ যৌন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ হত্যার ঘটনা। অনেক ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা হলেও সুবিচার তথা ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না বললেই চলে। কলকারখানায় কর্মরত শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমদানের বিষয়টি সুবিদিত। চুরির অপরাধে অথবা ছুতানাতায় শিশু শ্রমিককে অকথ্য মারধরসহ পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার একাধিক অভিযোগও রয়েছে। অথচ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্প্রতি আইএলও কনভেনশন-১৩৮ অনুসমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে সাধারণভাবে ১৫ বছরের কম বয়সী কোন শিশুকে শ্রমে নিয়োজিত করা যাবে না। তবে এটি এখন পর্যন্ত কেবল কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। শিশুশ্রম নিরসনে সরকার বাধ্যতামূলক সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, মিড ডে মিল কর্মসূচী বাস্তবায়নসহ ২৮৫ কোটি টাকার বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অগ্রগতির হার আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাও শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিবন্ধক।
বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর এমনই বাস্তবতা যে, অধিকাংশ শিশু অবহেলা ও অনাদরের শিকার। আমাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন এবং আধা-সামন্তবাদী সমাজের বদলে আধুনিক সমাজের বিকাশ সাধন করে এই সঙ্কট কিছুটা হলেও দূর করা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ার মূল কারণ আসলে দারিদ্র্য। কেননা, অনেক শিশু শ্রমিকের আয়েই চলে তাদের পরিবার। অভাবের তাড়নায় নিরুপায় হয়ে শিশুরা এসব কাজ করছে। সস্তা শ্রমের কারণেও সুযোগ নিচ্ছে মালিকপক্ষ। এমতাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ-অঝুঁকিপূর্ণ উভয় শ্রমে শিশুদের নিরস্ত করা কঠিন বৈকি। দেশে যতদিন দারিদ্র্য ও বেকারত্ব থাকবে, ততদিন এসব কাজে শিশুদের বিরত রাখা সম্ভব হবে না। এজন্য সেসব শিশুর অভিভাবকের কর্মসংস্থানসহ জীবনমানের উন্নয়ন প্রয়োজন। ক্ষেত্রবিশেষে বিধবা বা দুস্থ ভাতার মতো ঐ শিশুদের জন্যও বিশেষ ভাতা চালু করার চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।